বাংলাদেশি অভিবাসীদের আটকে রাখা নিয়ে যা বলল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ PM , আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ PM

সম্প্রতি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে ভারত। যদিও বছরের পর বছর ধরে চলছে এই কার্যক্রম। এবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে এ বিষয়ে এল কঠিন বার্তা। ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার এবং সংশোধনাগারে বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে কেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেটি নিয়ে জবাব চেয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
এছাড়া আটক থাকা বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে থাকায় এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কী করণীয় তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী আটক হলে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে বলেও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট রিপোর্ট অথবা হলফনামা পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, আসামের ট্রানজিট শিবিরে আটকে থাকা ৬৩ জন বিদেশি নাগরিককে অবিলম্বে ফেরত পাঠাতে হবে। কোন দেশের নাগরিক জানলেই দুই সপ্তাহের মধ্যে সে দেশের রাজধানীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে বলে বিচারপতি এএস ওক এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া নির্দেশ দেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, বিচারপতি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মহাদেবান যে মামলাটি শুনছিলেন, সেটি অনেক পুরোনো। আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দুর্দশা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা পড়েছিল ২০১১ সালে। হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে মামলা শুরু করে। ২০১৩ সালে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যায়।
গত মাসের ৩০ তারিখের শুনানিতে বিচারপতিরা বলেন, গত ১২ বছরে এই মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি। মামলা শুরুর সময়ে আদালতে জানানো হয়েছিল, ৮৫০ জন বাংলাদেশি অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রয়েছেন। সেই সংখ্যাটা এখন কত, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, সরকার এ ক্ষেত্রে নিজেই নিজের আইন লঙ্ঘন করছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশ থেকে আগত কোনও অবৈধ অভিবাসী এ দেশে আটক হলে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে ফেরত পাঠানোর কথা। আটক অভিবাসী যদি ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৪৬-এর ধারায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তা হলেও কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই তাকে ফেরত পাঠানোর কথা।
বিচারপতিদের কথায়, “একটা জিনিসই বুঝতে পারছি না। অবৈধ অভিবাসনের জেরে দণ্ডিত ব্যক্তি যে ভারতের নাগরিক নয়, সেটা তো প্রমাণ হয়েই গেছে। তারপরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তার পরিচয় যাচাই করার কী আছে?”
২০০৯-এর নভেম্বরে জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পরিচয় যাচাই এবং প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কেন সেটা পালন করা হয়নি, সেই প্রশ্নই তুলেছেন বিচারপতিরা। মামলার সূত্রপাত যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে, তাই এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কী করণীয়, সেটাও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে বলেছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট।