চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে রাতভর পাহারায় গ্রামবাসী

কালাই
  © টিবিএম ফটো

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক অপরাধ ঘটলেও প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিচ্ছেন।

গভীর রাতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কালাই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, যার ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে ১৪৮টি গ্রামের অধিকাংশে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় পাহারাদার কমিটি গঠন করেছেন।

ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রাতে দলবদ্ধভাবে পাহারা দিচ্ছেন। প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজন সদস্যকে এতে অংশ নিতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।গ্রামগুলোর প্রবেশপথ ও সন্দেহজনক স্থানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।অপরিচিত কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, প্রয়োজনে তথ্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে।কিছু এলাকায় রাতের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বাঁশের বেড়াও বসানো হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কালাই উপজেলায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে।অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় চুরি,ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটেছে,যার মধ্যে রয়েছে দিনদুপুরে টাকা ছিনতাই, সংঘবদ্ধ দলের ডাকাতির ঘটনা, মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে গণডাকাতি, গরু চুরি, বেশকয়েকটি ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি, দিনের বেলায় তিনটি মোটরসাইকেল চুরি এবং ভেরেন্ডি গ্রামে দিনেরবেলায় ডাকাতরা পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে ৩ ভরি স্বর্ণ ও ৮০ হাজার টাকা লুট করে। এসব ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে অপরাধীদের স্পষ্ট চেহারা ধরা পড়লেও গ্রেফতারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। থানায় একাধিক অভিযোগ করা হলেও পুলিশ শুধু আশ্বাস দিয়েছে,কিন্তু এখনও বেশিরভাগ অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় নিজেরাই নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানান গ্রামবাসীরা।

নওয়াপাড়া গ্রামের সাজ্জাদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েক মাসে একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই আর চুরির ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি! কিন্তু এটা পুলিশের দায়িত্ব ছিল!

থুপসারা গ্রামের টিম লিডার তাজুল ইসলাম বলেন, দিনভর কাজ করে রাতে ঘুমানোর অধিকার আমাদের আছে।কিন্তু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় আমাদের নিজেদেরকেই এখন জানমালের পাহারা দিতে হচ্ছে।

উতরাইল গ্রামের ছানোয়ার হোসেন বলেন,এভাবে আর কতদিন চলবে? প্রশাসনের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।না হলে জনগণ তো একসময় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।"

কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন জানান, পুলিশ চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।টহল জোরদার করা হয়েছে এবং কিছু অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।