বিলুপ্তির পথে পুষ্টিকর বেতফল

বেত
বেতফল  © সংগৃহীত

বেতফল নগরজীবনে তো বটেই ইদানীং বনবাদাড়েও বেশ দুষ্প্রাপ্য। একসময় গৃহস্থবাড়ির ঝোপঝাড়ের ভেতর প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বেতঝোপে ফলগুলো সুদৃশ্যভাবে ঝুলে থাকত। এখন গাছও কমে যাচ্ছে , ফলও  তেমন পাওয়া যায় না।

একইভাবে মতলব উত্তর উপজেলার বাড়ির পেছনে অযত্নে বেড়ে ওঠা বেতগাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না। ওই এলাকায় বেতগাছ এখন বিলুপ্তির পথে। ফলে এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেতগাছ, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বেতফলও।

বেতগাছে ফুল আসে আশ্বিন-কার্তিক মাসে আর ফল পাকে চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এ ফলকে বেতফল বা বেতুন বলে। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ওষুধিগুণ সমৃদ্ধ। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এ ফল খুব মিষ্টি হয়। আবার স্থান ভেদে একটু টকও হয়। বেতফল মরিচ দিয়ে চাটনি করে খেতে খুব মজাদার। পাকা বেতফল এমনিতেই খেতে দারুণ সুস্বাদু।

এছাড়া গ্রামের কৃষকের অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেতগাছ। বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার আছে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কৃষকরা বেত বিক্রি করার জন্য আসতেন। একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত ২'শ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলার ব্রাহ্মণচক গ্রামের বাসিন্দা আলী আর্শাদ সরকার বলেন, গত কয়েক বছর আগেও তিনি তাদের বাড়ির আঙ্গিনাসহ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেত গাছের বাগান দেখেছেন। কিন্তু এসবের চাহিদা কমে যাওয়ায় আজ এ বাগানগুলো আর দেখা যায় না। 

রসুলপুর গ্রামের শাহআলম দেওয়ান  এক ব্যক্তি বলেন, তারা ছোট বেলায় বেত ফল দিয়ে খেলাধুলার পাশাপাশি এগুলো শখ করে খেয়েছেন অনেক। কিন্তু বর্তমানে এগুলো আর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেত ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ২০ বছর জড়িত। কয়েক বছর আগেও ওড়া বা ধামার চারদিক মজবুত করে গিঁট দেওয়ার জন্য বেত ব্যবহার করা হতো। অথচ আজ বেতগাছ অনেকটাই  বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে বেতের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের দড়ি বা রশি। 

মনিরুল ইসলামের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ, তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সালাউদ্দিন বলেন,  রেস্তোরাঁ বা অফিসের কক্ষে শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া বেতফল অনেক পুষ্টিগুন স্মৃধ্য। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে। তাই বেতফল আজ বিলুপ্তির পথে।