কক্সবাজার সৈকতে স্মরণকালের ভাঙন, নির্মাণ হবে স্থায়ী বাঁধ

সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ভাঙন  © টিবিএম ফটো

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে গত দুই দিনে সাগর গর্ভে বিলীন হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনাসহ ৫ কিলোমিটার এলাকার বড় অংশ। এতে ঝঁকির মুখে পড়েছে সমুদ্র পাড়ের ৫ শতাধিক ব্যবসা কেন্দ্রসহ হোটেল-মোটেল। 

এদিকে, সমুদ্র সৈকতের এই ভাঙন ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভাঙন রোধে নাজিরার টেক থেকে মেরিনড্রাইভ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে জিও ব্যাগের বাঁধ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর বৈরী আবহাওয়াসহ সাগরের উচ্চ জোয়ারের আঘাতে এই বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভেঙে যায়। কিন্তু এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকার ডায়বেটিক পয়েন্ট, সৈবাল, লাবনী, সী-গাল, সুগন্দা ও কলাতলী পয়েন্টের বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। এতে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কসহ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বিশাল অংশ। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সমুদ্র পাড়ের ৫ শতাধিক দোকানসহ হোটেল-মোটেল। 

স্মরণকালের এই ভাঙ্গনে উদ্বিগ্ন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটক। এর ফলে পরিবেশ ধ্বংসসহ নানা কারণে প্রকৃতির এমন বৈরী আচরণ বলে মনে করছেন তারা। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় পর্যটন নগরী হুমকির মুখে পড়ছে বলেও জানান তারা।

সমুদ্র সৈকতের লাইফ গার্ড সাইদুল ইসলাম বলেন, ১০ বছর চাকরি জীবনে অনেক ভাঙন দেখেছে তবে এই চিত্র দেখেনি। এতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের গোসল করাসহ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

সমুদ্র পাড়ের দোকানদার মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ভাঙন যে এত কাছে চলে আসবে তা বুঝতে পারেনি। এই মুহূর্তে তারা সবাই আতঙ্কিত। ভাঙন অব্যাহত থাকলে প্রায় ৫০০ দোকানসহ অনেক হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ দরকার, না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রাশেদ চৌধুরী নামে এক পর্যটক জানান, বছরে কয়েকবার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসেন তিনি। এতবেশি ভাঙন আগে কখনো চোখে পড়েনি তার। এজন্য মানুষই দায়ী। পরিবেশ দুর্ষণসহ প্রকৃতির সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের ফলেই এমনটা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ফলে প্রায়ই সমুদ্রের পাড় ভাঙে। তবে এর আগে কখনো এত বড় ভাঙন দেখা যায়নি। এজন্য সাগর থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনসহ নানা অব্যবস্থাপনা দায়ী। স্থায়ী বাঁধের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করছি। নয়তো পর্যটন নগরীর জন্য হুমকি অপেক্ষা করছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন পরিদর্শনে গিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার জানান, সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশের ভাঙনরোধে কয়েক বছর ধরে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। এই জিও ব্যাগ অস্থায়ী ব্যবস্থা। তাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু হবে। জরুরি ভিত্তিতে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে পানি উন্নয়নের বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গাগুলোতে জিও ব্যাগ পুনরায় স্থাপন করা হচ্ছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ