অন্ধ বাবার সাথে প্রতারণা করে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ: বৃদ্ধার শেষ আশ্রয় পথে
- গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৯ PM , আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৯ PM

পিতা-মাতা সন্তানের মাথায় ছায়ার মত, সন্তানের জন্য সব চেয়ে বড় সম্পদ। তাদের চেয়ে পৃথিবীতে আপন আর কেউ নাই। সন্তানকে আদর-যত্নে লালন-পালন করে ছোট থেকে বড় করে তোলেন। সেই সন্তান যখন পিতা মাতার সাথে প্রতারণা করে জায়গা-জমি লিখে নিয়ে যায় তখন মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। বৃদ্ধ বয়সে শেষ সম্বল বলতে থাকার জায়গা-জমি ঘর হারিয়ে পথে নামার মত এমনই উপক্রম হয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপায় এক বৃদ্ধ পিতা-মাতার।
বয়সের ভারে গলাচিপা পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ড রতনপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ মকবুল আহাম্মেদ (৮০) চলাফেরা করতে পারেন না। প্রায় আঠারো বছর ধরে ঘরে পড়ে আছেন অসুস্থতা নিয়ে। চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন অনেক বছর আগে দেখতে পারেন না। ভাঙ্গা জরাজীর্ণ টিন-কাঠের ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ স্ত্রী আমেনা বিবি কে নিয়ে শেষ বয়সে ঠাই হয়েছে তাদের। এমন অবস্থার মধ্যেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বৃদ্ধ অন্ধ পিতার থেকে অজান্তে প্রতারণা করে বাড়ি-ঘরসহ সকল জায়গা জমি লিখে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিজের বড় ছেলে মো. সেকান্দার (৫০) এর বিরুদ্ধে। এমন পাষন্ড ও মানুষত্ববোধহীন প্রাণী হয়তো এ সমাজেই কমই পাওয়া যাবে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিহীন মকবুল আহাম্মেদ ওরফে মকবুল হোসেন হাওলাদার পিতা. আজাহার হাওলাদার। তার মোট সাত ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি জে এল নং ১০৮, রতনদী মৌজার এস এ ৫৫১ নং খতিয়ানের জমায় ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে পূর্বের সংশোধনী রেকর্ডীয় মালিক মমতাজ উদ্দিন মোল্লা এর নিকট থেকে দলিল নং ১১৭৯১ ও ৮১১২ মতে কবলা মূলে জমার মালিক হন। যা হাল দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে ২০১৭ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক হন। উক্ত জমি বড় ছেলে মো. সেকান্দার গত ৩০ মে ২০২২ ইং তারিখে চিকিৎসা করার নাম করে বাবা মকবুল হোসেন কে গলাচিপা সাব-রেজিষ্টার অফিসে নিয়ে গোপনে দলিলে টিপ সই রেখে ১০ শতাংশ জমি তাছলিমা বেগম স্বামী. মো. শহীদুল আকন, লিটন আকন ও বায়েজিদ হোসেন উভয়ই পিতা. মো. শহীদুল আকনের নামে জে এল নং ১০৮, রতনদী মৌজার এস এ খতিয়ান নং ৫৫১, হাল দিয়ারা জরিপে খতিয়ান নং ২০১৭ জমার দাগ নং ৯৮০৮, ৯৮০৯ জমার জমি লিখে নেয়, যার দলিল নং ৬০৩৮/২২। যাতে মকবুল হোসেনের পরিচিতি সনাক্তকরী করা হয় মো. গিয়াস উদ্দিন পিতা. মৃত নূর আহম্মেদ হাওলাদার, ঠিকানা ৬নং ওয়ার্ড আরামবাগ। অন্য সব ওয়ারিশগণ কে বঞ্চিত করে বৃদ্ধ অন্ধ বাবার সাথে প্রতারণা করে গোপনে সেকান্দার এমন কান্ড ঘটিয়েছে বলে পরিবার অভিযোগ করেন।
বৃদ্ধ অন্ধ মকবুল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, 'আমি কেউরে জমি লেইখা দেই নাই। আমারে ডাক্তার দেহানের কথা কইয়া সেকান্দার শহরে নিয়া গেছে। কুম্মে নেছে কি করছে আমি কিছু কইতে পারি না। পরে আমারে ঔষধ কিন্না দিয়া কয় এই ঔষধ লইয়া বাড়িতে যাও। আমারে বাড়িতে দিয়া গেছে সেকান্দার। কোন সাক্ষর / টিপ সই নেছে কিনা কইতে পারি না।'
ছোট ছেলে সোবহান মিস্ত্রির বউ মিনারা বেগম বলেন,'আঠারো বছর ধরে আমার শশুর ও শাশুড়ী ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। এর আগে আমার ভাসুর সেকান্দার তার দুই ছেলের নামে ৭ শতাংশ জমি দলিল করে নিছে শুনছি। বাকি যে জায়গা জমি ঘরের ভিটা, পুকুর যা সম্পত্তি ছিলো আমার শশুর মকবুল মিস্ত্রি কে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে গলাচিপা নিয়ে শহিদুল আকনের বউ ও পোলাগো নামে আমার ভাসুর সেকান্দার সব জমি দলিল কইরা দিছে। আমার শশুর অন্ধ মানুষ কানে কম শোনে সে কিছু কইতে পারে না তারে নিয়া কি করছে জানে না। গতকাল দলিল এর কথা শুইনা হাউমাউ করে কানছে।'
এ বিষয়ে সংরক্ষিত (৪,৫,৬) ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সালমা সুলতানা বলেন, এই বাড়ির সেকান্দার ও সোবাহান এর বিষয়ে অনেক বার সালিশ বৈঠক করেছি। এর আগেও শুনছি জমি দলিল করে নিছে সেকান্দার তা নিয়ে আমি ও বাবলু কমিশনার সালিশ করছি। এখন হটাৎ শুনি টোটাল বাড়ি- ঘরসহ ১০ শতাংশ জমি নাকি সব দলিল করে নিয়া গেছে সেকান্দার। এখন এই পরিবার বাড়ি ঘর ছাইড়া কোথায় যাবে। অন্ধ অসুস্থ বুড়া-বুড়ি নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছি। আমার প্রতিবেশী হওয়ায় যখন যা লাগে আমি দিছি কিন্তু এখন এদের কি হবে। তাই তাদের সম্পত্তি যাতে ফিরে পায় তার দাবি জানাই।
অভিযোগ এর বিষয় জানতে চাইলে সেকান্দার হাওলাদার জানান, আমার বাবা স্ব ইচ্ছায় জমি লিখে দিছে। আমি কোন অন্যায় করিনি।