সোনাগাজীতে চালু হওয়া ভেড়া খামারে রয়েছে অপার সম্ভাবনা

সারাদেশ
ভেড়ার খামার  © টিবিএম ফটো

ফেনীর সোনাগাজী বাজারের পশ্চিমে ১১ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভেড়ার খামার। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নদী থেকে আসা লবণাক্ত পানির প্রভাবে তখন মারা যায় অধিকাংশ ভেড়া। ফলে ওই সময় ভেস্তে চায় প্রকল্পটি। বন্ধ হবার প্রায় ২৭ বছর পর কেন্দ্রটি চালু হলেও এতদিন সেখানে পালন হচ্ছিল হাঁস। কিন্তু হাঁস প্রজনন কেন্দ্র সফলতার মুখ দেখতে না পারায় চলতি বছররের মার্চ মাসে কেন্দ্রটিতে আবার ভেড়া পালনের কার্যক্রম শুরু হয়। পুরনো একটি শেডে চালু করা হয়েছে এই খামারটি। খামারে ২৫টি ভেড়া দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০ টি ভেড়ি ও ৫ টি ভেড়া। 

ভেড়াগুলো জীবন যাপনের জন্য রয়েছে রুটিন মাফিক নিয়ম। কখন কি খাবার খাবে, কতটুকু খাবে তার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট তালিকা ও পরিমাপ। খাওয়ানোর জন্য বগুড়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বিশেষ প্রজাতির ঘাস। খামারের মাঠে ছোট ঘাস এবং এই বিশেষ প্রজাতির ঘাস শুধু উৎপাদন করা হয় ভেড়ার জন্য। সেই ঘাস মাঠে চাষ করে বড় করে ভেড়ার খাওয়ার উপযোগী করা হয়‌। খাওয়ানোর জন্য রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেয়ারটেকার। নিয়মমাফিক ছাড়া হয় ভেড়া গুলোকে মাঠে। সকাল ৮ টায় ছেড়ে ১০ টায়  আবার তুলে আনা হয়। পানি ও দানাদার খাদ্য দেওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ১১ টার দিকে ছেড়ে দুপুর ১ টায় উঠিয়ে আনা হয়। আবার এক ঘন্টা বিশ্রামের পর দুপুর ৩ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত থাকার পর আবার উঠিয়ে আনা হয়।


সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে মেষ খামারটি চালু হাওয়া এই এলাকার কর্মসংস্থানের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। সাধারণ মানুষ মেস খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মেশ পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এতে করে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে।

আরেক বাসিন্দ আমেনা বেগম জানান, সোনাগাছজী উপজেলায় বিশাল চড় থাকায় এখানে ভেড়া পালনের সম্ভাবনা অনেক। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও ভেড়া পালন করতে পারবেন। এতে করে নারীর ক্ষমতায়ন ও আত্মনির্ভরশীলতার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফেনী প্রানী সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি হতে পারে। ভেড়া থেকে বছরে এক থেকে দেড় কেজি পশম পাওয়া যায়। মা দিয়ে উন্নতমানের শীতবস্ত্র তৈরি করা যায়। ভেড়ার উৎপাদন বাড়ার হার শতকরা ১২ ভাগ। যা গরু, ছাগল বা মহিষের চেয়ে অনেক বেশি। ভেড়ার বাসস্থানের খরচও কম। ভেড়ার মাংশে আমিষের পরিমাণ গরু, ছাগলের বা অন্য যেকোন মাংসের চেয়ে বেশি।

সোনাগাজীর ভেড়ার খামারে ষষ্ঠ ও নবম গ্রেডের দুজন অফিসার ও পাঁচজন কর্মচারীর পথ সৃষ্টি করা হলেও এখন পর্যন্ত এই খামারে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আপাতত এটি চালাচ্ছে পূর্বের হাঁস প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ খামারের ব্যবস্থাপক জাহিদ বিন রশিদ জানান, আমাদের এই মেষ খামারটি অনেক বছর আগের। কিন্তু লবণাক্ত পানির প্রভাবে পূর্বে অনেক ভেড়া মারা যাওয়ায় এই খামারটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এটি হাঁস প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ছিল। বর্তমানে মেশ খামারের সম্ভাবনা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ এটাকে আবার মেশ খামার হিসেবে চালু করেছে। এই অঞ্চলে ভেড়া পালনের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। মাংস খুব সুস্বাদু ও ছাগলের মাংস থেকে ভালো বলে চাহিদাও রয়েছে অনেক। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে ব্যাপকভাবে ভেড়ার খামাটি চালু হলে অনেকে ভেড়া পালনে উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে করে এই কর্মকর্তা।