কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ছুটছেন তেঁতুলিয়ায়

পর্যটন
নীল আকাশে ডাকছে দর্শনার্থী পর্যটকদের  © মোমেন্টস ফটো

উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে হাসছে শ্বেতশুভ্রের কাঞ্চনজঙ্ঘা। নীল আকাশে ডাকছে দর্শনার্থী পর্যটকদের। আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) ভোর থেকে স্পষ্টভাবে দেখা মিলছে বিমোহিত রূপে। কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ দেখতে প্রতিদিন ছুটছেন পর্যটকরা। পর্যটকের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশে পরিণত হয়েছে পর্যটন শিল্প অঞ্চল এ জেলাটি।

আজ ভোরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার পর্যটন স্পট ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা বিমুগ্ধ চিত্তে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপমাধুর্য উপভোগ করছেন। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে। এসেই সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ডাকবাংলোয় দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে ধারণ করছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। সেলফি তুলছেন, ছবি ও ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ নানান সোস্যাল নেটওয়ার্কে। 

ফিরোজ-মিথিলা দম্পতি জানান, আমরা রংপুর থেকে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায় ছুটে এসেছি। আমরা অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে দেখেছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে মেঘমুক্ত আকাশে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত দেখা যায়। গত সাতদিন কুয়াশা থাকার কারণে দেখা যায়নি। আমরা আজ সকালে এসেই দেখতে পেয়ে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি। আর এখানকার পরিবেশ এতো সুন্দর তা এখানে না এলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। এখানে নদী, ভারত, নেপাল তিনটি দেশ দেখতে পেরে সুভাগ্যবান মনে করছি। বিশেষ করে এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কোন পাসপোর্ট-ভিসা লাগছে না। মিথিলা জানান, মনে হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার আরও কাছে যাই, এতোটাই লোভ লাগছে।

রাজশাহী থেকে ফাতেমাতুজ্জোহরা সিনথি বলেন, কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছি। তাই আমরা রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছি। যদিও অসুস্থ্য, তারপরেও বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। আমরা জেনেছি কাঞ্চনজঙ্ঘা সকালে এক রূপ ধারণ করে, দুপুরে আরেক রূপ ধারণ করে। আসলে আমাদের পঞ্চগড়টা অনেক সুন্দর। পঞ্চগড় পরিবেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাচ্ছি, অনেক ভালো লাগছে। একই কথা বলেন, রাজশাহী চাপাইনবাব গঞ্জ থেকে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে নেপালেই আছি। পাহাড়, নদীর সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।  

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা নুশরাত জাহান বলেন, কিছুদিন ধরেই আসতে চাচ্ছি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে। কিন্তু গত কয়েকদিন দেখা যায়নি বলে জানতে পারি। আজ সকালে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছি। দেশের মাটি থেকে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লাগছে। 

রংপুর থেকে আসা ইব্রাহিম রাজ জানান, আমরা দুই বন্ধু রংপুর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। গতকাল দেখতে পারিনি। আজ ভোরে দেখতে পেরে তার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি ফ্যামেলি মেম্বার নিয়ে আসতাম। তবে আবার আসবো বলে জানান তিনি। এছাড়াও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বেশ কয়েকজন পর্যটক। 

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়টায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে  কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। এ বছরে কদিন সামান্য দেখা গেলে মেঘ ও কুয়াশার কারণে দেখা যাচ্ছিল না। ঈদ-ই মিলাদুন্নবী ও পুজোর ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল, কিন্তু দেখা না যাওয়ায় অনেকে হতাশা নিয়েই ফিরে গেছেন অনেক পর্যটক।   

এ অঞ্চল থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে তুষারাচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র (আকাশ পথে) ১১ কিলোমিটার।

মেঘমুক্ত নীলাকাশের নিচে তাকালে মনে হবে চোখের সামনেই সাদা পাহাড়। ভোরের আকাশে বরফ আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম পর্বতটি বেশ উপভোগ্য। কখনও তা রুপালি চকচকে রূপ ধারণ করে।

এছাড়াও এখান থেকে সন্ধ্যায় দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চল। কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে যে কালচে পাহাড়টা দেখা যায় সেটি পাহাড়ের ঢালে ভারতের প্রসিদ্ধ শহর দার্জিলিং। সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ডাকবাংলোর নদী মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে উত্তরের পাহাড়ের দিকে তাকালে যেসব আলো দেখা যায়, সেটি শিলিগুড়ি শহরের। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের অফিসার ইনচার্জ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে থাকে এখানে। বিশেষ করে এ সময়টাতে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রচুর পর্যটক এসে থাকে। এবারও পর্যটকরা আসছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও তারা এখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদাই ট্যুরিস্ট ও থানা পুলিশসহ প্রশাসন তৎপর রয়েছেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রতি বছর হেমন্ত-শীত ঋতুতে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুরা আসছেন। আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের তীর্থস্থান তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা নির্মাণ করেছি। পর্যটকদের বসার জন্য গ্যালারী করা হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা সহজে দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্ট হাউজ আমরা প্রস্তুত রেখেছি।


মন্তব্য