প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন

গণভবন যেন গ্রামের ‘গেরস্ত বাড়ি’

প্রধানমন্ত্রী
  © সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের জমিতের চাষ করা অর্ধেক জমির পেয়াঁজ তোলা হয়েছে। এতে মোট ৪৬ মণ পেয়াঁজ পাওয়া গেছে। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের মতো পেয়াঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণভবনের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই চুপ থাকেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও  গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করছেন। গ্রামের গেরস্ত বাড়ির মতো রাজধানীর বুকে অবস্থিত পুরো গণভবনকে একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ তুরস্কে আরও দুই ভূমিকম্পে নিহত ৩

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগী, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, মসলা জাতীয় ফসল, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।  তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

Untitled design - 2023-02-19T201030-701

গণভবন সূত্র জানায়, রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে এক হাজার ৮৫২ কোজি (৪৬ মণ)। বাকি জমির পেয়াঁজ উত্তোলন সম্পন্ন হলে এর পরিমাণ একশ’ মনের মতো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে চাষ করা ৪৬ মন পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। ৫ জনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে ৫ কেজি হিসাবে ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মন পেঁয়াজে ৭/৮’শ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

Untitled design - 2023-02-19T201023-542

প্রেস সচিব বলেন, ‘এদেশের আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি, মানুষ ও  কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।’ ইহসানুল করিম জানান, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, গণভবন আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, ব্রোকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন।

আরও পড়ুনঃ শারীরিকভাবে অসুস্থ পুতিন, মার্চে নতুন চিকিৎসা শুরু

এছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা, আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এছাড়া গণভবনের আঙ্গিনায় আলাদা করে গরু, দেশি হাস-মুরগী, তিথির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই,কাতল, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবনের পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।

গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব  নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।