গড়ে ৯০ টাকার খেজুর দেশে এসে হয়ে যায় ১৮শ টাকা!

খেজুর
  © ফাইল ফটো

চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে খেজুর ক্রয় করলেও বাজারে কোথাও ২৫০ টাকার নিচে খেজুর নেই। খেজুরের মান ভেদে বাজারে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যেক রমজানে দেশে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। একে পুঁজি করে আমদানিকারকরা দামে ভয়ংকর কারসাজি করেন। এবার তারা খেজুরভেদে কেজিতে ৩ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত মুনাফা করছেন।

রমজান উপলক্ষে ২৮ ধরনের খেজুর আমদানি হলেও কাস্টমস শুল্কায়নে সব খেজুরের মান নিম্ন এবং দাম এক। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়া হয়। তবে বন্দর থেকে খালাসের পরই পাল্টে যায় চিত্র। উন্নত, মাঝারি ও নিম্ন– তিনটি ক্যাটাগরিতে বিক্রি করে বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

চলতি অর্থবছরে ২৮ ধরনের খেজুর এলেও সবগুলো একটি এইচএস কোড (পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর) মূলে শুল্কায়ন করেছেন আমদানিকারকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি মার্চে দাম আরও কমে যাওয়ায় এখন সব খেজুরের গড়মূল্য দেখা যাচ্ছে ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা। কিন্তু বাজারে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে খেজুর। এ হিসাবে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও এ চক্রের দাম কারসাজির সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, খেজুরের বাজারে ভয়ংকর জালিয়াতি চলছে। উচ্চমূল্যের খেজুর নিম্নদামের ঘোষণা দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করছেন কিছু আমদানিকারক। এর মাধ্যমে তারা সরকারকেও রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। তিন পদ্ধতিতে খেজুর বাছাই করে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা। দাম কারসাজিতে সিরাজুল ও নুরের যোগসাজশ মিলেছে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তার দোকানে বেশি দামে খেজুর বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। তাঁরা ২৫ থেকে ২৮ ধরনের ৯ হাজার ২১১ টন খেজুর আনলেও সব ক’টি একটি এইচএস কোডের বিপরীতে শুল্কায়ন করেছে। প্রতি কেজি খেজুরের আমদানি মূল্য মাত্র ৮৪ দশমিক ৬৪ টাকা হলেও সিরাজুল ইসলামের দোকানে হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে।’

ইরাকের জাহিদি খেজুরের চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি দাম মিসরের মেজডুলের। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসে আমদানিকারকরা সব খেজুরের দাম এক ঘোষণায় এনে উচ্চ হারের শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো খেজুরের দাম ১০০ টাকা হলে কাস্টমসে তার শুল্কায়ন হবে আমদানি মূল্যের ওপর। ২৭ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হার নির্ধারিত রয়েছে। এখন ৩০০ টাকার পণ্যও ১০০ টাকা ঘোষণা করা হলে শুল্ক হারে কোনো পরিবর্তন আসে না। মাঝে শুল্ক বঞ্চিত হয় সরকার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইরাকের জাহিদি ছাড়াও বাংলাদেশে বেশি বিক্রি হয় আমিরাত গোল্ড। এটির দাম জাহিদির চেয়ে তুলনামূলক বেশি। নাগাল, রেজিস, দাব্বাস ও লুলু খেজুরও আসে আমিরাত থেকে। দুবাইয়ের লুলু, মদিনার মাশরুক, মরিয়ম, কালমি, সাফাওয়িসহ ২৮ রকমের খেজুর এ দেশে আসে। চ্যানেল ২৪