২২০ টাকার আদা এখন ৪৮০-৫০০ টাকা!

চীনা আদা
  © সংগৃৃহীত

দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে অন্যতম ভোগ্যপণ্য আদার বাজার দর। ১ মাস আগেও যে চীনা আদা ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি কেজিতে। তবে দেশি আদাসহ অন্যদেশের আদার দাম এখনও অনেকটাই কম। আমদানি নির্ভর পণ্যটির সরবরাহ কম থাকায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর উল্লেখযোগ্য বাজারগুলো ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

চীনা আদার দাম বাড়ার কারণ আমদানি কমে যাওয়া। বিশ্ববাজারে বুকিং দরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে দেশের আমদানিকারকেরা পণ্যটির আমদানিতে লাগাম টেনেছেন বলে জানা গেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণে ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বার্মিজ আদা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, ভিয়েতনামের আদা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও দেশি আদা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে আকারে বড় এবং রান্নার জন্য প্রসেস করতে সুবিধার কারণে চীনা আদার চাহিদা বাজারে সবসময়ই বেশি।

আদার এমন মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের কপালে। আসন্ন কোরবানি ঈদ আদা এমন তেজিভাব ধরে রাখবে বলে আশঙ্কা তাদের।

আমদানিকারকরা বলছেন: গত দুই তিন মাস ধরে চীন থেকে যে আদা আমদানি করা হয়েছে তার মান খারাপ ছিলো। তাই লোকসান গুণতে হয়েছে আমাদের। লোকসান ঝুঁকির প্রেক্ষিতে আমদানি বন্ধ রেখেছিলাম আমরা অনেকে। এখন নতুন করে আবার আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নতুন আদা আসলে দাম কমে আসবে।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কেরালা আদা আসতে শুরু করেছে। এই আদার দাম পড়ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার মতো। এই আদা আমদানির প্রভাব এখনও বাজারে পড়েনি। তবে অচিরেই এ আদা আমদানির কারণে বাজারে দাম কমে আসবে বলে আশা করছেন আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, পচনশীল হওয়ায় কৃষিপণ্যে আদার দীর্ঘ সময় ধরে মজুদ করা সম্ভব নয়। এটি চাষে খরচ যেমন আছে নষ্ট হবার প্রবণতাও আছে। মানুষ আগে বসত ভিটায় আদার চাষ করতো। কিন্তু বসত ভিটায় জায়গা কমেক যাওয়ায় সেটিও এখন কমে গেছে।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিকটন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিকটন। এ বছর উৎপাদন কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিকটন। গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।

আদা চাষের জন্য সময় লাগে প্রায় ১ বছর (৩০০ থেকে ৩১০ দিন)। এই সময়ে অন্য ফসল দুইটি পাওয়া গেলেও আদার ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব না। সেজন্য কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদা  চাষ নেই বলতে গেলেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে আমের বাগান-লিচু বাগানে সাথী ফসল হিসেবে এবং বাড়ির আঙিনায় আদা চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।


মন্তব্য