হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, অনুমতি পেল বেনাপোল দিয়েও

পেঁয়াজ
  © সংগৃৃহীত

আজ সোমবার (৫ জুন) থেকে দীর্ঘ আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই ভারতীয় ২টি ট্রাকে ৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করছেন এন আলম ট্রেডার্স নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। 

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, দেশী কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে পরদিন ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি বন্ধের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ফলে সরকার আবারও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করায় আজ সোমবার প্রথম দিনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এন আলম ইমপোর্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ২টি ট্রাকে ৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করেছে। এসব পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ২০০ ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করা হবে।

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরের ১৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩০ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

আরও পড়ুন:- আমদানির খবরে পেঁয়াজের দামে ধস

এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭৫ মেট্রিক টন (৩ ট্রাক) পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন এক আমদানিকারক। সোমবার (৫ জুন) দুপুরে স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আমদানিকারক জারিফ ইন্টারন্যাশনাল বন্ধের পর এই প্রথম বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দর থেকে ছাড়পত্রের জন্য কাজ করছে রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।

মূলত অন্যান্য বন্দর যেমন হিলি, সোনা মসজিদ ও ভোমরা বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয় তার চার ভাগের এক ভাগ পেঁয়াজ আমদানি হয় বেনাপোল দিয়ে।

রয়েল এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্বত্তাধিকারী রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের আমদানিকারকের ৭৫ মেট্রিক টন (৩ ট্রাক) পেঁয়াজ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে এসে পৌঁছেছে। ওই পেঁয়াজের জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে সার্টিফিকেট নিতে আবেদন করা হয়েছে। ভারত থেকে বিকেল নাগাদ পেঁয়াজ প্রবেশ করবে বেনাপোল বন্দরে। তারপর কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছাড় করে ঢাকায় পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, আর কোনো আমদানিকারকের পেঁয়াজ ওপারের বন্দরে নেই। তবে দু’এক দিন গেলে কিছু পেঁয়াজ বেনাপোল দিয়ে প্রবেশ করবে। অনেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামারবাড়িতে ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) জন্য আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে ব্যাংকে এলসি খুলবেন। তারপর পেঁয়াজ আসবে। এখন পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো বাধা নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের বাজার ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছিল। ৩০ টাকার পেঁয়াজ ভোক্তাদের কিনতে হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ আমদানি না করা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা দাবি জানালে ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ সোমবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন:- দামে ঝাঁজ ছড়ানোর মধ্যে এলো পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন চাষিসহ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করতে থাকেন। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, গত ১৫ মার্চ থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। যার কারণে এতদিন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। সামনে কোরবানি ঈদ। এই দিনে পেঁয়াজের প্রয়োজন বেশি হয়। সরকার অনুমতি দেওয়ায় এখন পেঁয়াজ আমদানি হবে এবং দাম অনেকটাই কমে আসবে।

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশনা এসেছে। আইপি দেখালে আমরা এখান থেকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ সার্টিফিকেট ইস্যু করবো। এরইমধ্যে রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তাদের আমদানিকারকের পক্ষে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে আবেদন করেছে।

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে বন্দর থেকে দ্রুত পেঁয়াজ খালাস নিতে পারেন সে ব্যবস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ