ডলার সংকট:

টিকিট বিক্রির আয় নিজ দেশে পাঠাতে পারছে না বিদেশি বিমান সংস্থা

ডলার সংকটে
  © ফাইল ছবি

ডলার সংকটের কারণে টিকিট বিক্রির আয় নিজ দেশে পাঠাতে পারছে না বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। এতে টিকিটপ্রতি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। কোনো কোনো সংস্থা ফ্লাইট কমিয়ে দিচ্ছে। চাহিদামতো ডলার না থাকায় এয়ারক্রাফটের জ্বালানি ক্রয়েও হিমশিম খাচ্ছে তারা।

তেল কেনার মূল্য পরিশোধে ডলার বাধ্যতামূলক হওয়ায় সংকট আরো তীব্র হয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকেই দেশে ফ্লাইটসেবা প্রদানকারী বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর তহবিল প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে সপ্তাহে সাধারণত ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত টার্কিশ এয়ারলাইনস। বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামী ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির ২৪ মিলিয়ন ডলার দেশের ব্যাংকগুলোতে রেখেছে তারা।

টিকিট বিক্রির এই আয় পাঠাতে না পারায় আকাশপথে যাত্রীবাহী সংস্থাটি গত নভেম্বর থেকে সপ্তাহে মাত্র সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করণীয় নেই। টার্কিশের মতো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালিনদো এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, ক্যাথে প্যাসিফিকসহ বেশির ভাগ বিদেশি এয়ারলাইনস তাদের বাংলাদেশগামী ও বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে একই কারণে। 

আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, অনুমতি পেল বেনাপোল দিয়েও

টার্কিশ এয়ারলাইনসের হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সাত্তার সিদ্দিক বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে থাকায় এরই মধ্যে আমরা সক্ষমতা হ্রাস করেছি। নভেম্বর থেকেই এটা শুরু করা হয়।’

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার আটকে আছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার বেশি। গতকাল আইএটিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উড়োজাহাজশিল্পের আটকে থাকা অর্থের ৬৮ শতাংশ আটকে আছে পাঁচটি দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দ্রুত সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে না পারলে বা এই বিশাল দেনা শিগগিরই শোধ করতে না পারলে আকাশপথে যোগাযোগ সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।

আইএটিএ জানিয়েছে, উড়োজাহাজশিল্পের আটকে থাকা অর্থের মধ্যে শীর্ষে থাকা দেশগুলো হলো নাইজেরিয়া (৮১২.২ মিলিয়ন ডলার), বাংলাদেশ (২১৪.১ মিলিয়ন ডলার), আলজেরিয়া (১৯৬.৩ মিলিয়ন ডলার), পাকিস্তান (১৮৮.২ মিলিয়ন ডলার) ও লেবানন (১৪১.২ মিলিয়ন ডলার)।

আইএটিএ সতর্ক করে জানিয়েছে, অর্থ আটকে রাখার ক্রমবর্ধমান মাত্রা উড়োজাহাজ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য হুমকি। এই শিল্পে ২০২২ সালের এপ্রিলে আটকে থাকা তহবিলের পরিমাণ ছিল ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের এপ্রিলে ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২.২৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আইএটিএ হলো বিশ্বের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন। এটি প্রায় ৩০০ উড়োজাহাজের সংস্থা বা মোট এয়ার ট্রাফিকের ৮৩ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটি উড়োজাহাজ চলাচলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনীতি প্রণয়নে সহায়তা করে।

আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ জানান, এমন পরিস্থিতিতে এয়ারলাইনসগুলো এসব বাজারে তাদের সেবা চালিয়ে যেতে পারে না। কারণ এসব বাজারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে আসা রাজস্ব ফেরত আনা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতি সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, সরকারকে এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে। আইএটিএ এসব দেশের সরকারকে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার আহবান জানিয়েছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ