নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে পাবেন আজীবন পেনশন সুবিধা, আসছে নীতিমালা

পেনশন
  © ফাইল ছবি

নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও পেনশন সুবিধা পাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১ জুন জাতীয় সংসদে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় পঞ্চাষোর্ধ ব্যক্তিদেরও পেনশন–ব্যবস্থার আওতায় আনার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন–সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।  

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই এ কর্মসূচি চালু করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজটি ইতিমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, অর্থ বিভাগ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পেনশন কর্মসূচি চালুর কাজটি করছে। বিভাগটি এরই মধ্যে একটি বিধিমালা জারি করেছে, যার নাম ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের চাকরি বিধিমালা, ২০২৩’। আরও তিনটি বিধিমালা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা’, ‘পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা’ এবং ‘জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা’।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী মাসে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এক মাসের মধ্যে বাকি তিনটি বিধিমালা জারি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  

প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি—এই চার শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়ে আপাতত পেনশন কর্মসূচি চালু করা হবে। তার আগে তাঁদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, অসচ্ছল ব্যক্তি একটা আপেক্ষিক শব্দ। ফলে অস্বচ্ছলকে আগে চিহ্নিত করা হবে। অসচ্ছলদের জন্য মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাকিদের জন্য ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকছে।

জানা গেছে, চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হবে। এমনকি কর্মসূচি পরিবর্তনেরও সুযোগ থাকবে। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রবাসী শ্রেণিতে একজন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কেউ যদি দেশে ফিরে আসেন, তাহলে তাঁর কর্মসূচি পরিবর্তন করা যাবে। সরকারি চাকরিজীবী ও বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরতদের আপাতত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি থেকে বাদ রাখা হচ্ছে। তাঁদের ২০৩৫ সালের পর সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর পেনশনের আওতাভুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে। তবে পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছরের আগে কেউ মারা গেলে, তাঁর নমিনি বাকি সময়ের জন্য পেনশন পাবেন। এছাড়া চাঁদা দেওয়ার ১০ বছরের মধ্যে কেউ মারা গেলে জমাকৃত টাকা মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ঋণ হিসেবে নেওয়া যাবে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রীও এসব কথা বলেন। নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে। মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করে এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।

পেনশন কর্তৃপক্ষের অফিস ঠিক হয়নি। আপাতত অর্থ বিভাগের একটি কক্ষকে কর্তৃপক্ষের অফিস বানানো হতে পারে।