রাশিয়ার সম্পদ জব্দের পর

মজুত সোনা নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার হিড়িক

সোনা
  © ফাইল ছবি

রাশিয়ার সম্পদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকে থাকা সোনার মজুত নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্কো গত রোববার এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, গত বছর ও এই বছরের প্রথম তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রেকর্ড পরিমাণ সোনা কিনেছে। কারণ তারা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বন্ডের দামের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। এই পথে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে চীন ও তুরস্ক। গত বছর থেকে শুরু করে এ বছরের প্রথম তিন মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কেনা মোট সোনার এক-পঞ্চমাংশই কিনেছে এ দুটি দেশ।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা কিনেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বৈশ্বিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশই এখন নিজেরাই সোনা মজুত করতে শুরু করেছে। ইনভেস্কোর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ বলছে, তারা নিজেরাই এখন সোনা মজুত রাখছে। ২০২০ সালে যা ছিল ৫০ শতাংশ। আগামী পাঁচ বছরে এই প্রবণতা ৭৪ শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করছে ইনভেস্কো।

ইনভেস্কোর সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বিশ্বের ৫৭টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ৮৫টি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল। তাদের ৯৬ শতাংশ মনে করে, সোনায় বিনিয়োগ করা বেশি নিরাপদ।

পশ্চিমা দেশের একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ইনভেস্কোকে বলেছেন, ‘আমরা এখন নিজেরাই সোনা মজুত রাখা অনেক বেশি নিরাপদ মনে করছি। এজন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের সোনার মজুত ফিরিয়ে দিয়েছি। এটাই বরং বেশি নিরাপদ।’

তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছর সবচেয়ে বেশি সোনা কিনেছে। কারণ দেশীয় ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য তুরস্ককে সোনা সরবরাহ করতে হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ৬৪ হাজার কোটি ডলারের সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করেছে বলে অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। এর পরই মূলত সতর্ক হয়ে ওঠে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ কারণে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো নিরাপদ ব্যাংকগুলোতেও এখন সোনা মজুত রাখার আকর্ষণ হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনসাইডার বলেছে, ইনভেস্কোর সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪১ শতাংশ জানিয়েছে- তারা আগামী তিন বছরের মধ্যে সোনা কেনায় বরাদ্দ আরও বাড়াবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলেছে, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গত বছর ১ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন সোনা কিনেছে। এটি গত ১২ বছরের মধ্যে একটি রেকর্ড।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘মার্কিন ডলার’ বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ডলার। কিন্তু গত বছর রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যখন একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে গেল বিশ্বের অন্যান্য দেশ। তারা ডলার মজুতের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে ওঠে এবং সোনা মজুতের দিকে মনোযোগ দেয়।

ইনভেস্কোর অফিসিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রধান রড রিংরো বলছেন, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের সোনার মজুত নিজেদের কাছে রাখার কথা ভাবছে। গত এক বছরে তাদের ধারণা এমন হয়েছে যে, নিজেদের সোনার মজুত নিজেদের দেশেই রাখা উচিত।-ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি