রাষ্ট্রায়ত্ত ১৩টি পাটকলের ছাদে হবে সোলার পার্ক, জায়গা ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান

সৌর বিদ্যুৎ
  © প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও গুদামের কারখানার ছাদ ইজারা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন এবং পরিবেশে কার্বন নির্গমন কমাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ভবনগুলোর ছাদের প্রায় ৬৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় সোলার সিস্টেম (সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প) স্থাপন করা হবে; এ লক্ষ্যে এই জায়গা ইজারা দিতে ইতোমধ্যেই সরকার একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দরপত্রের নথি অনুসারে, প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে ছাদ। তবে, প্রাথমিক ইজারার ফলাফল সন্তোষজনক হলে, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সোলার পার্কগুলোর মালিকানা বিজেএমসি'কে হস্তান্তর করা হবে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক এবং দেশের বিশিষ্ট নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞ মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সাধারণত ১ মেগাওয়াট সোলার রুফটপ সুবিধা স্থাপনের জন্য প্রায় ৭০,০০০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়।

সেই হিসেবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের ১৩টি পাটকল থেকে প্রায় ৯০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজেএমসি চেয়ারম্যান আনিস মাহমুদ বলেন, "বিদ্যুতের অন্তত ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত জায়গা আসলে খুব কম। এজন্য সরকার বড় বড় ভবনের রুফটপে (ছাদে) সোলার পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। সেটির অংশ হিসেবে পাটকলের রুফটপ লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"

তিনি বলেন, "পাটকলের কারখানা ও গো-ডাউনগুলো অনেক বড়, অনেক জায়গাজুড়ে রয়েছে, যা আপাতত কোনো কাজে লাগছে না। তবে এখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাটকলের ফ্যাক্টরি ও গো-ডাউন ভাড়া বা লিজ দেওয়া হবে।"

পাটকলের কারখানা ও গুদাম ভবনের ছাদে সোলার পার্ক স্থাপিত হলে সেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানান আনিস মাহমুদ। এটি যেমন দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে, তেমনি অব্যবহৃত জায়গার ব্যবহারও নিশ্চিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

খালি পড়ে থাকা জায়গা উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করাই এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য।

বর্তমানে বাংলাদেশ ২,১৬১টি রুফটপ সোলার সিস্টেম থেকে মোট ১৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৪.৫৮৮ মেগাওয়াট আসছে রুফটপ নেট মিটারিং সুবিধা থেকে; এই ব্যবস্থায় খরচের চেয়ে বেশি উৎপান হলে জাতীয় গ্রিডে সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। 

টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রুফটপে বাকি ৬৯.৯৩৪ মেগাওয়াটের সোলার সিস্টেম নেট মিটারিং ছাড়াই স্থাপিত হয়েছে।

ভূমি স্বল্পতার কারণে শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ছাদে সৌর প্রকল্পের স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রচারণাও বাড়াচ্ছে।

কারখানা এবং বাণিজ্যিক ভবনের মালিকরাও ছাদের ওপর সোলার সিস্টেম স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কারণ এই ব্যবস্থায় তরল জ্বালানি-ভিত্তিক ও গ্রিড বিদ্যুতের তুলনায় সাশ্রয়ী উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

বর্তমানে ছাদে সৌর বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট উৎপাদনে ৬ টাকারও কম খরচ হয়; অন্যদিকে তরল জ্বালানি-ভিত্তিক ক্যাপটিভ জেনারেশন উপায়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৭ টাকা; এছাড়া,  গ্রিড সংযোগের জন্য ইউনিটপ্রতি প্রায় ৮ টাকা খরচ হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, মোট চাহিদার প্রায় ৪ শতাংশ পূরণ হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

এদিকে, বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক লোকসানের কারণে ২০২০ সালের ১ জুলাই সরকার বিজেএমসির আওতাধীন সমস্ত মিল বন্ধ করে দেয়।

মিলগুলো বন্ধের পর বেসরকারি খাতে ১৭টি মিল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হয়েছে মাত্র ৩টি পাটকল।

এখন, বিজেএমসি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে ভবনগুলোর ছাদ বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।