একটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ হতে পারে ১২ টাকা : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:০৯ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩০ PM

প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা ধরে খুচরায় সর্বোচ্চ ১২ টাকা দাম হতে পারে বলে মত দিয়েছেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রোববার সচিবালয়ে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটা ডিম উৎপাদনে সাড়ে ১০ টাকা খরচ হয়। ১২ টাকার উপরে কোন ভাবে দাম হওয়া উচিত নয়।’
ডিমে কেউ অনায্য লাভ করলে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান মন্ত্রী। একটি ডিমে গুনতে হচ্ছে ১৪ টাকার বেশি
সপ্তাহ-দুয়েক ধরেই টালমাটাল ডিমের বাজার। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। একটি ডিম কিনতে ভোক্তার খরচ হচ্ছে ১৪ টাকার বেশি। যা ডিমের দামে রেকর্ড। বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালালেও সুফল দৃশ্যমান হয়নি।
প্রান্তিক খামারি বলছেন, বাজারের তুলনায় প্রতি পিস ডিমে তারা ২ টাকা কম পান। কারণ ডিম বিক্রি পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত। দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন, সমিতির মাধ্যমে ডিমের দাম কত হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের নির্ধারিত দামের বাইরে ডিম বিক্রির সুযোগ নেই। সারা দেশে ডিমের দর কত হবে তা নির্ধারিত হয় রাজশাহী, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে। প্রতিদিন সকালে ডিমের দর নির্ধারণ করে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তায় সবাইকে জানিয়ে দেয় সংগঠনগুলোর হর্তাকর্তারা।
দেশের সব এলাকায় আড়তদাররা ডিম সংগ্রহ করলেও এই তিন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করার কারণে এই তিন অঞ্চলের বাজার পর্যালোচনা করে ডিমের দাম ঠিক করা হয়।
তবে, আড়তদারদের দাবি, ডিমের বাজার চলে গেছে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে। তারাই ক্রয় রশিদ দিচ্ছে না। করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে, ডিমের দাম না করলে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চাইলে ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। ডিমের কত উৎপাদন হচ্ছে, বাজারে কত চাহিদা আছে, ঘাটতি কত- এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আমাদের কিছুই জানায়নি। এমনকি ডিমের উৎপাদন খরচ কত এবং কত টাকা দাম নির্ধারণ করা উচিত সেটাও তারা বলেনি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি এসব তথ্য আমাদের দেয়, তবে বাজার বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দেবে।’
সচিবালয়ের সভায় ডিম আমদানি প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘ডিম আমদানি করা, না করার বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনা করবো। বাণিজ্যমন্ত্রণালয় আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। শিল্পটা বিন্যাস হলে ডিম আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।’
এ সময় ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে।
সভায় তিনি বলেন, ‘লোকসানের ভয়ে অনেকে পোল্ট্রি ব্যাবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। লম্বা সময় ধরেই উৎপাদন কমছে। বর্তমানে ৫ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি।’
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘কাজী, প্যারাগনসহ অন্য ব্যবসায়ীরা লস করছে। তাদের এখানে বিনিয়োগ আছে। লস হলেও তারা ব্যবসা ছেড়ে দেন নি। আমরা ডিম আমদানির পক্ষে নই। ইমপোর্ট করে চালালে এ শিল্পটা ধ্বংস হবে। নানামুখী চ্যালেঞ্জের কারণে ডিম আমদানি করা কঠিন। ১১ টাকা প্রতি পিচ উৎপাদন খরচ ছোট খামারিদের। ছোট খামারিদের জন্য সাড়ে ১০ দশ টাকা। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে তিন হাত বদল হয়।’
ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেশে নতুন নয়। এ বছরের শুরুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজন প্রতি প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছিল। এর আগে গত অগাস্টেও ডিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। পরে বর্ষা শেষে দাম কমে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা হয়।
তবে এবারে এক ডজন ডিমের দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হওয়ার ঘটনাকে বলা হচ্ছে দেশের ইতিহাসে ডিমের সর্বোচ্চ দাম।