নিত্যপণ্যের বাজারে নেই কোনো সুখবর, বাড়ছে ফলের দামও

দাম
  © ফাইল ছবি

সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সবজির। ৬০ টাকায় মধ্যে এখন শুধু পেঁপে, পটল মিলছে। অন্যান্য সবজি কিনতে কেজিপ্রতি ৮০-১২০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেও নেই কোনো সুখবর নেই। দু-একটি পণ্যের দাম সামান্য কমলেও বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে তা বেশি।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহামম্দপুর, মিরপুর বাজার ঘুরে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।

বাজারে দেখা যায়, লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এছাড়া করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি। এমন একটা চক্রে চলছে বাজারে, যেন দেখার কেউ নেই।

সোহরাব নামে এক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। ভোক্তাদের জিম্মি করে তারা ব্যবসা করছেন। প্রকৃত কারণ ছাড়াই নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমনটি হচ্ছে।

অন্যদিকে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ এর আগে ২৫-৩০ টাকার মধ্যে আলু খেতে পারতো মানুষ। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে। যা প্রায় মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে, কাঁচা মরিচ ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশ চড়া। এসব বাজারে এক কেজি চাষের শিং (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ১৯০-২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে একই দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়। কক মুরগি ৩২০ টাকা, কক হাইব্রিড ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাড়ছে বিদেশি ফলের দাম:
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবসহ সারাদেশে বেড়েছে জ্বর-সর্দি। এমন অবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবারই বেশি করে ফল-মূল খাওয়া প্রয়োজন।

বিশেষ করে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের বেশি করে ফলের জুস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই ফলের বাজারে যেন আগুন লেগেই থাকছে। প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে বিদেশি ফলের দাম। তবে তুলনামূলক কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে দেশি ফলগুলো।

শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায়, নাশপতি ২৭০ থেকে ২৮০, লাল আঙুর ৪২০, সবুজ আঙুর ৪০০, ফুজি আপেল ২৮০ থেকে ৩০০, গালা আপেল ২৮০ থেকে ৩২০, সবুজ আপেল ৩৮০ থেকে ৪২০, অস্ট্রেলিয়ান আপেল ৩০০ থেকে ৩৩০, কমলা ৩৬০ থেকে ৪০০, সাম্বাম ১৫০, নাগফল ২৬০ থেকে ৩২০, আনার ৩০০ থেকে ৪৫০ ও ড্রাগন ফল ২৫০ থেকে ৩২০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মাল্টার দাম প্রায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। এছাড়া আনার, আঙুর, কমলাসহ আরও কিছু ফলের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। শুধু কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে সবুজ আপেলের দাম।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নূর হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, প্রতি সপ্তাহে ফলের দাম বাড়ছে। কিন্তু কেন বাড়ছে সেটা আর আমদানিকারকরা বলেন না। তারা শুধু দাম বাড়ায়। এখন আনার, লাল আঙুর, কমলার সিজন। কিন্তু তারপরেও এসব ফলের দাম অনেক বেশি। আমরা বাদামতলী থেকে ফল কিনে এনে বিক্রি করি। কেজিতে ১০-১২ টাকা লাভ করি। কেন দাম বাড়ছে সেটা বলতে পারবো না।

মো. মামুন হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে সিজন হিসেবে ফলের দাম অনেক বেশি। ফল আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। যার কারণে বাজারে বিদেশি ফলের সরবরাহ কম। আর এজন্যই তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন। আর রাজধানীতে যেহেতু বাদামতলী ছাড়া আর কোথাও ফল আমদানি করা হয় না, তাই তারা যে দামে বিক্রি করেন আমাদেরও সেই দামেই কিনতে হয়। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে বাজার যাচাই করে কেনার উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, এক মাস আগে ১৫ কেজির এক কার্টুন মাল্টা কিনেছি দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। অথচ গতকাল সেই একই মাল্টা কিনতে হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে। এক মাস আগে ৭ কেজির এক কার্টুন লাল আঙুর কিনেছি দুই হাজার ১০০ টাকায়, যা গতকাল কিনতে হয়েছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। ২৫০ টাকা কেজির আনার গতকাল পাইকারিতেই কিনতে হয়েছে ৩৫০ টাকা করে। তাহলে আমরা কত করে বিক্রি করবো। বিদেশি ফলের দাম যা বাড়ে, সেটা আমদানিকারকরাই বাড়ায়।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ফলের দাম বাড়ার পেছনে কারণ যেটাই হোক বা যারাই দোষী হোক, শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেট করে ফলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

তরিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ফল আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোয় ফলের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যাবে এটা অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন। ফলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ট্যাক্স বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফলের দাম। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বা চাকরিজীবীরা চাইলেও এত দাম দিয়ে ফল কিনতে পারেন না। কারণ আমাদের বেতন তো আর বাড়েনি।