একলাফে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ১৮ টাকা!
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৬ PM , আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৬ PM

পূজার বন্ধের পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানি কমের অজুহাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম একলাফে বেড়েছে কেজিতে ১৮ টাকা। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা। বন্ধের কারণে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তবে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তির কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বলে দাবি আমদানি কারকদের।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ইন্দোর ও নাসিক জাতের পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দরে বর্তমানে ইন্দোর জাতের প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে (ট্রাকসেল) ৭৮ টাকা কেজি দরে যা পূজার বন্ধের পূর্বে ৬০ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া নাসিক জাতের পেঁয়াজ বর্তমানে ৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা পূজার বন্ধের পূর্বে বন্দরে ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব হোসেন বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন মোকামে পেঁয়াজ সরবরাহ করে থাকি। যেহেতু দুর্গাপূজার কারণে ৬ দিন বন্ধের পর বৃহস্পতিবার প্রথম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তাতে করে আশা ছিল দুই-চার ট্রাক পেঁয়াজ ক্রয় করে মোকামে পাঠাবো। কিন্তু যে হাড়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তাতে করে কেনাতো দূরে থাকলো পেঁয়াজে হাত দেয়া যাচ্ছে না এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
অপর পাইকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, পূজার বন্ধের আগে ও পরে কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকার মতো সবধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা যেসব মোকামে পেঁয়াজ পাঠাই সেসব মোকামগুলোতে পেঁয়াজের বাড়তি দামের কথা জানিয়েছি তারা কেউই ক্রয় আদেশ দেয়নি আমাদের। হঠাৎ করে পেঁয়াজের এত দাম বাড়ার কারণে আমাদের পেঁয়াজ কিনতে পুঁজিও বেশি লাগছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৬ দিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আবারো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও দাম খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী। এর কারণ হলো ভারতের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সেসব অঞ্চলে অতিবৃষ্টি বন্যা দেখা দেয়ার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার কারণে ভারতের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে সেসব অঞ্চলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো থাকা মোকামগুলো থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন। যার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় ভারতের মোকামগুলোতেই পেঁয়াজের দাম খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পূজার বন্ধের আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ রুপিতে ক্রয় করলেও সেই পেঁয়াজ বর্তমানে আমাদের ক্রয় করতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ রুপি দরে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ মিলিয়ে ৭৫ টাকার ওপরে পড়ছে আমাদের। মূলত বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানির ফলেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজ না পাওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এতে করে দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ কমায় দাম বাড়তে শুরু করেছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, পূজার বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় খানিকটা কমেছে। বন্দর দিয়ে পূজার বন্ধের আগে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। পূজার বন্ধের পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও বৃহস্পতিবার মাত্র ২০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আগামীকাল শনিবার থেকে আবারো দুদেশের মাঝে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচাপণ্য অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাস্টমসের পরীক্ষণ শুল্কায়ন আউটপাশ শেষে দ্রুত যেন বন্দর থেকে পেঁয়াজ খালাস করে নিতে পারেন সেলক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।