বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন

গাজীপুরে টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ

পোশাক শ্রমিক
  © সংগৃৃহীত

ঢাকার অদূরে আশুলিয়া এবং গাজীপুরে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক ধর্মঘট পালন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ এসময় কারখানা ভাঙ্চুর এবং রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছোঁড়ে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা৷

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএম ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। এর পরপরই চৌধুরীবাড়ী এলাকায় বেলমন্ড গার্মেন্টস, ব্রাদার্স ফ্যাশন লিমিটেড ও রুয়া ফ্যাশন লিমিটেডসহ অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা জোবাইদা টাওয়ারে অবস্থিত টিএম ফ্যাশনের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সাড়ে ৮টার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিছিল নিয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করলে শিল্প পুলিশ ও বাসন থানা পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কের আশেপাশে অবস্থান করছে। 

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, পোশাক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভাঙচুর না করে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

শুধু গাজীপুরে একহাজারের বেশি কারখানা রয়েছে যেখানে এইচএন্ডএম এবং গ্যাপ-এর মতো পশ্চিমা জনপ্রিয় ব্রান্ডের পোশাক তৈরি করা হয়৷

''পোশাক কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন কারণ যে বেতন তারা পান তা দিয়েই আর বেড়ে চলা খাবারের খরচ মেটানো যাচ্ছে না,'' আশুলিয়ায় বলেন পোশাক শ্রমিকদের সংগঠনের নেতা আল কামরান৷

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় তৈরি পোশাক রপ্তানিকার দেশ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির বাৎসরিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে৷

আশুলিয়া শিল্প এলাকা পুলিশের উপপ্রধান মাহমুদ নাসের বলেন, ‘‘বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ১৫ হাজারের মতো পোশাক কর্মী আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷''

শ্রমিক নেতা কামরান অবশ্য পুলিশের বলা এই সংখ্যা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন৷ তার হিসেবে শুধু আশুলিয়াতেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ৫০ হাজারের মতো পোশাক কর্মী৷ আর এই আন্দোলনের মূল কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য গতবছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া বলেও জানান তিনি৷

কামরান বলেন, ‘‘আলুর দাম এখন ৭০ টাকা, পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকা৷ অথচ গতবছর আলুর দাম ছিল ৩০ টাকা, আর পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা৷''

‘‘বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে৷ শুধুমাত্র একটা জিনিসই বাড়েনি, সেটা হচ্ছে বেতন,'' যোগ করেন তিনি৷

উপপুলিশ প্রধান মাহমুদ জানিয়েছেন যে প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, কারখানার জানালা ভেঙ্গেছে এবং শিল্প এলাকার সঙ্গে রাজধানীতে যাতায়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়৷ ফলে পুলিশ একপর্যায়ে ‘‘রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷''

পোশাক কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন গতসপ্তাহে শুরু হলেও সোমবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসলে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ তখন এক কর্মী মারা যান৷ আরেকজন কর্মী পুলিশ এবং প্রতিবাদকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাণ হারান৷


মন্তব্য