রোজার দুই মাস আগেই বাড়ছে ছোলা চিনির দাম
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৩ PM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৬ PM

পবিত্র রমজান মাসের বাকি আরও দুই মাস। এর আগেই বাড়তে শুরু করেছে ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছোলা ও চিনির দাম। কেজিতে মান ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে এসব পণ্যের দাম।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলারের দাম বাড়ায় ছোলা-ডাল-চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য এখন বাড়তি দামেই আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, রমজানে ছোলাসহ ইফতারি পণ্যের দাম বাড়ালে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এজন্য আগেভাগেই তারা ভোক্তার পকেট কাটা শুরু করেছেন। বাজারে এসব পণ্যের সংকট এড়াতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আটটি পণ্য আমদানির সুযোগ রেখে বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। পণ্যগুলো হলো ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই রমজান কেন্দ্র করে বাজারে প্রশাসনের নজরদারি, অভিযানসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবার সে সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে কয়েক মাস আগেই পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে সময়মতো আমদানির অভাবে পণ্যগুলোর বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয়ে ওঠে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার আগে সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ছে ছোলা, ডাল, চিড়া, গম ও চিনির। ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েলের দাম না বাড়লেও সয়াবিনের দাম বেড়েছে। শীতে পাম অয়েল জমে শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে চাহিদা কম থাকায় দাম বাড়েনি। তবে রোজা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ পণ্যটির দামও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগেও চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে ডাল-চিনিসহ আমদানি করা অন্য নিত্যপণ্যের দামও। মোটা ডাল কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, সরু ডাল কেজিপ্রতি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০। আর কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫-৬৫ টাকা। খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা ও ৭০-৭৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘দেশের নানামুখী সংকটের কারণে সরবরাহ কম। তা ছাড়া ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলোর অনীহায় রোজার বাড়তি চাহিদার সমপরিমাণ পণ্য এখনো আমদানি হয়নি। যার কারণে সংকটের আশঙ্কায় বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ীই রোজার কয়েক মাস আগেই পণ্য সংগ্রহ করেন। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। বাজারে পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ চেইনে কোনো সংকট না থাকলে রোজার পণ্য এ বছরও স্বাভাবিক দামেই বিক্রি হবে। এজন্য প্রশাসন ও ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রতিবছরই রমজানের কয়েক মাস আগে থেকেই দাম বাড়তে শুরু করে। রমজানের সময় তদারকি বেশি থাকে এ কারণে আগেই দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবারও তাই হচ্ছে। একদিকে নির্বাচন গেল, এ সুযোগে সবকিছুর দাম বেড়েছে। চালের দামও বাড়ানো হয়েছে। অথচ এখন চালের ভরা মৌসুম। এ কারণে এখন থেকেই রমজানের তদারকি শুরু করতে হবে।’