একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে টমেটোর দাম

দাম
  © বাংলাদেশ মোমেন্টস

রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করলেও কোনো তৎপরতাই যেন কাজে আসছে না। সরকার খেজুর, চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেগুলো মানছে না ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৩০০ টাকা কেজি দরের তিউনিশিয়ার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ৮৫ টাকা কেজি দরের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। ১৩৫ টাকার চিনি ১৬০ টাকা কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। ভালো মানের মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরের শসা একদিনের ব্যবধানে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকা হালির লেবু ৮০ টাকায় ঠেকেছে। বেগুনের দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বাড়ানো হয়েছে ইফতার পণ্যের দামও। মুড়ি, খেজুর, বেসন, সরিষার তেল, বুটের ডালের দাম ১০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ২২০ টাকা দরে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা শুধু মুখে বললে হবে না। এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে নিত্যপণ্য দিতে হবে। পণ্যের দামে লাগাম টানতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেগুলো ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে না। 

গোলাম রহমান আরও বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বছরের পর বছর ভোক্তারা ঠকছেন। সংস্থাগুলো জানে কে বা কারা পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। একাধিকবার তারা সেটা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

খুচরা বাজারের পণ্যমূল্যের মধ্যে নভেম্বরে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। চিনির কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। সোমবার সেই ছোলা বিক্রি হয় ১১০ টাকা কেজিতে। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। ডিসেম্বরে ১৫৫ টাকা, আর সোমবার ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে নভেম্বরে প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, ডিসেম্বরে দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ও  সোমবার বিক্রি হয় ১৭০ টাকায়।

প্রতি কেজি তিউনিশিয়ান খেজুর নভেম্বরে ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আর সেই একই খেজুর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা কেজি। নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশি জাত বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে ফেব্র“য়ারির শুরুতে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। সোমবার তা ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়। 

এদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল ১৭০ টাকা আর নভেম্বরে দাম ছিল ১৮৫ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকায়।

খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে মান ও দামভেদে সাদা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হতো। বুটের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। যা আগে ৯০ টাকা বিক্রি হয়। এছাড়া ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি তিন মাস আগে ১৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০০ টাকা। বড় সাইজের রুহ আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। যা আগে ২০০ টাকা ছিল।  সোমবার প্রতি লিটার খোলা সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৭০ টাকা। যা আগে ২৫০-২৬০ টাকা।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লাল আপেল ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ২৬০-২৭০ টাকা ছিল। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। যা আগে ২৮০-৩০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আনার বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা। যা আগে ৩১০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি বরই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা যা আগে ৭০-৮০ টাকা ছিল। পেয়ারার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৭০ টাকা ছিল।

এদিকে একদিনের ব্যবধানে টমেটোর দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। রোজার একদিন আগেও টমেটোর কেজি ছিলো ৫০ টাকা। একেদিনের ব্যবধানে সেটা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। গাজরের কেজি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, পণ্যের দাম ক্রেতার সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অবৈধ মজুত গড়ে পণ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।


মন্তব্য