বেগুন নিয়ে কারসাজি: দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা, লাভবান ব্যবসায়ীরা!

বেগুন
  © ফাইল ছবি

এবার সবজি নিয়ে কারশাজি শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। উত্তরের জেলা পাবনার হাটবাজারে হঠাৎ করেই দরপতন হয়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির। সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে বেগুন ও লাউয়ের। বেগুন পাইকারি হাটে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সেই হিসেবে প্রতি কেজি বেগুনের দাম দাঁড়াচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকায়। আর সাধের লাউ বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকায়। অথচ এই বেগুন কিছুদূর গেলেই কেজিতে ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকা শহরে আসলে হয়ে যাচ্ছে ৮০ টাকা।

সবজির এমন দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। লাভ তো দূরের কথা। উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকদের। এই রমজান মাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দামে বেগুন লাউ বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের।

কৃষকরা জানান, এক মাস আগেও পাবনার পূর্বাঞ্চল বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় যে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই বেগুন কৃষকেরা প্রতি কেজি পাইকারি দুই থেকে তিন টাকা দরে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ৫০-৬০ টাকা দরে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে মাস খানেক আগে। এখন কৃষকেরা এসেই লাউ হাটে নিয়ে চার থেকে পাঁচ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। অথচ খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। আর প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। শুধু দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।

শুধু লাউ বা বেগুনই নয়, করলা, টমেটোসহ বেশির ভাগ সবজিই এখন কৃষকদের হাটে নিয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক কৃষকের সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন খরচ না ওঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

এ সম্পর্কে বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম (৫৫) বলেন, ‘জীবনে কুনুদিন দেহি নাই যে লাউ, বেগুনের দাম এত কুমিছে। ইবার দেখতিছি এরকম। বিক্রি করেই বা কিরবো। আবাদের খরচই উঠতিছে না।’

উপজেলার এক চাষি বলেন, ‘হাটে বেগুন লিয়ে আইসে দেহি ৮০-৯০ টেকা মণ দাম কয় ব্যাপারীরা। সে হিসেবে তো ২ থেকে ৩ টেকা কেজি পড়ে। মিজাজটা কিরম হয় তালি কন। এত কষ্ট কইরে ফসল ফলাইলেম, আর তার দাম এইরম। কি করবো বাধ্য হয়ে বেইচে দিয়ে গেলেম।’

মূলত রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে কমতে থাকে লাউ ও বেগুনের দাম। কৃষকরা বেগুন হাটে এনে কেজি দরের পরিবর্তে এখন বস্তা (প্রতি বস্তা ৪০ কেজি) হিসেবে বিক্রি করছেন। প্রতি বস্তা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে দুই থেকে তিনি টাকা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘একদিকে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে সবজির, অন্যদিকে রোজার কারণে মানুষের চাহিদা কম। তার ওপর সব ধরনের সবজি মানুষ একসঙ্গে খেতেও চাচ্ছেন না। এ কারণে সবজির দাম কমেছে। তবে ঈদের পর সবজির দাম আবার বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

এদিকে কিশোরগঞ্জের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কিশোরগঞ্জের হাওরে কৃষকের ক্ষেত থেকে ব্যবসায়ীরা গড়ে বেগুন কিনে আনছেন ৫০ টাকা মণে। এ হিসেবে কৃষক প্রতি কেজি বেগুনের দাম পাচ্ছেন মাত্র এক টাকা ২৫ পয়সা করে।

গত বুধবার (২০ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকের ক্ষেতে, গ্রামের বাজারে ও জেলা শহরের খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।

গ্রামের বাজারে মান ভেদে ভাগ করে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা কেজিতে। জেলা শহরে এ বেগুন বিক্রি হচ্ছে আবার ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি করে। তবে ঢাকা শহরে এসে এসব বেগুনের দাম হয়ে যাচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

ভোক্তারা জানান, রমজানে প্রতি বছরই আগুন লাগে বেগুনের বাজারে। ব্যতিক্রম ছিল না এবারও। সপ্তাহের শুরুতেও জাত ও মান ভেদে বেগুনের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। তবে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বেগুনের বাজারে।

করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালি বাজারের কাঁচা মলে গিয়ে দেখা গেছে, বেগুন বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। বড় জাতের বেগুন আবার ১৫ টাকা কেজি করে দাম চাওয়া হচ্ছে। একই চিত্র এই উপজেলার গ্রামের বেশ কয়েকটা হাটেও।

মরিচখালি বাজারের এক কৃষক জানান, তিনি ১৭ শতক জমিতে এবার বেগুন চাষ করেছেন। শুরুতে কিছু বেগুনে ভালোই দাম পেয়েছেন। গত দুই দিনে দাম একেবারেই পড়ে গেছে।

বেগুনের এমন দরপতনের জন্য ব্যবসায়ীদের দাবি করছেন অনেকেই। তাদের মতে, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে কৃষক পর্যায়ে বেগুনের দাম কমিয়েছে। অথচ একই বেগুন হাত ঘুরেই কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা পণ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহিতে হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


মন্তব্য