ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৎস্যখাতে ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি

রিমাল
  © সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডব চালানোর পর এখন চলছে উদ্ধার অভিযান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের হিসাব। এতে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় এলাকায়। কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্তের পাশাপাশি পানিবন্দী কয়েক হাজার পরিবার। কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর। শুধু মৎস্য খাতেই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। 

বরিশালের বটতলা থেকে চৌমাথা, বগুড়া রোড, গোরস্থান রোড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে। বাগেরহাটে বাঁধ ভেঙে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী কয়েক হাজার পরিবার। বরগুনায় ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর।

সাতক্ষীরায় এবার ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও, ভেসে গেছে শতাধিক মাছের ঘের। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম বাগানে।

ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে ঘরবাড়ির পাশাপাশি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ১২ হাজার পুকুর ও দুই শতাধিক টি মাছের ঘের।

মৎস অধিদপ্তরের হিসাবে উপকূলীয় এলাকার ১৩ জেলায় প্রায় ৪১ হাজার মাছের ঘের, ২৬ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং চার হাজার কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপকূলের বহু গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। অনেক জায়গায় খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে। গাছ ভেঙে বিদ্যুতের লাইনের উপর পড়ে আছে অনেক স্থানে। বিদ্যুত না থাকায় ইন্টারনেট সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল। বরগুনায় প্রায় ৯০০ বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে, ভেঙে গেছে আড়াইশটির মত। ১২শ স্থানে গাছ ভেঙে বিদ্যুতের লাইনের উপর পড়েছে। সাড়ে ৯শ জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। এতে পুরো জেলা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন।

বাগেরহাটে গাছ ভেঙে তারের উপর পড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন। নোয়াখালীতে বিদ্যুত না থাকায় ভোগান্তিতে আছেন প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক। কেবল পটুয়াখালী শহরেই ৫০টি বিদ্যুতে খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে বহু জায়গায় বিদ্যুতের সংযোগের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে। খুঁটিও ভেঙেছে অনেক স্থানে। এখন পর্যন্ত এসব জেলা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা অনিশ্চিত। 

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামন খাঁন বলেন, ‘কোথায় কোথায় তার ছেড়া আছে তা এ বৃষ্টির মধ্যেই শণাক্ত করার চেষ্টা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে আসলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি। আমাদের যে  কর্মীবাহিনী আছে তাতে খুব দ্রুত বিদ্যুতের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে নিতে পারবো।’ 

বিদ্যুতের অভাবে দেশের অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা।

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। কীভাবে আমরা সার্পোট দিতে পারি, র্পোটেবল জেনারেটরের সার্পোট আমরা দিতে পারি, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া, এই সবগুলো বিষয় নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মধ্যে আছি।

বরিশাল ও সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সেই সাথে স্বাভাবিক হচ্ছে ইন্টারনেট সেবাও।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ ও স্থানীয়রা। সুন্দরবনে এত উঁচু জলোচ্ছ্বাস সাম্প্রতিক সময়ে দেখেননি স্থানীয়রা। লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে বনের স্বাদু পানির ৮০টি বড় পুকুরসহ শতাধিক পুকুর। 

অনেক বন্যপ্রাণী ভেসে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৯টি মৃত হরিণ, একটি মৃত বন্য শুকর ও আহত ১৭টি হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। 

এছাড়া রিমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ২১ জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।