৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০ পৌরসভায় নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত কাঁচাবাজার
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ১০:০৩ AM , আপডেট: ৩০ মে ২০২৪, ১০:০৩ AM

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু জবাই করে ক্রেতাদের কাছে মাংস বিক্রি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাঁচা বাজারের সুবিধা দিতে ১৪০টি পৌরসভায় কাঁচাবাজার নির্মাণ করছে সরকার। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) অধীনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় এ প্রকল্প নির্মাণ করছে সরকারের মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে ১৪০টি পৌরসভায় কাঁচা বাজার নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে থাকছে প্রশস্ত জায়গা, শাক সবজি, মাছ ও মাংসের আলাদা পাঁচটি শেড, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, নারী পুরুষের আলাদা টয়লেটসহ নানা সুবিধা।
তবে ১৪০টির মধ্যে শেষ হওয়া ১৩টি পৌরসভায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।
এক বছরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ১৪০টির মধ্যে ১৫টি পৌরসভার কাজ শেষ হয়েছে। আর চলমান রয়েছে ১২০টি। এখনও টেন্ডারই হয়নি পাঁচটি পৌরসভার কাজ। বিশ্বব্যাংকের প্রায় তিন শত কোটি টাকার অর্থায়নে এ প্রকল্পে প্রতিটি কাঁচাবাজার নির্মাণে বরাদ্দ দুই কোটি টাকার বেশি। তবে এই বরাদ্দে নির্মিত অবকাঠামোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘তারা বলেছে ঈশ্বরগঞ্জের জন্য ৯৪ লাখ টাকা। ডিজাইন, ম্যানুয়েল, ডিওকিউ দিয়েছে, কিন্ত এর জন্য এস্টিমেট দেয়নি। একচুয়াল এস্টিমেট তারা দেয়নি। ফরমালি এই বাজারের হস্তান্তর হয়নি।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুস সাত্তার বলছেন, ‘কাঁচাবাজার যেখানে করার কথা সেখান থেকে দূরে করা হয়েছে। ঠিকাদারকে দেখিনি। দুই তলা, পাঁচ তলা বা সাত তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন বানাইতো তাইলে বোঝা যেত। শুধু পাঁচ থেকে ছয়টা শেড বানিয়েছে। কোটি টাকা খরচ হয়েছে কিনা সন্দেহ। আমিওতো পৌরসভার কাজ করাই, তাই ধারণা আছে আমার।’
নওগাঁ ধামইরহাট পৌরসভার মেয়র আমিনুর রহমান বলেন, ‘জানি না কত টাকার কাজ, তবে আড়াই কোটি টাকার নয়, সন্দেহ আছে।’
বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা দরপত্র আহ্বান করে অধিদপ্তর। আর কাজ পায় এভারেস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
কাঁচাবাজার শেড নির্মাণে ঠিকাদারদের সঙ্গে করা চুক্তির বিস্তারিত জানতে টানা তিন দিন চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি কাউকে। অবশ্য প্রকল্প পরিচালকের দাবি, কোনো দুর্নীতি হয়নি এ প্রকল্পে।
এলডিডিপির প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, ‘টেন্ডার বিডিংয়ে তারা দুই বা পাঁচ শতাংশ কমে প্রাইস দিয়েছে। কিন্তু ২০, ৩০ বা ৫০ শতাংশ কমে কাজ চাচ্ছে এমনটি হয়নি। যারা অভিযোগ দিচ্ছে তারা সাইন্টিফিক বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ করে বলেননি। কাজ ভালো না হলে তার দায় মেয়রদের ওপরও বর্তায়।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুনাফা নিশ্চিতের জন্য কাজের মান কমায় ঠিকাদার। তাই বড় প্রকল্পের মান নিশ্চিতে সংস্থাগুলোর সঠিক তদারকি জরুরি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, জনপ্রতিনিধি যদি অভিযোগ দেন, তাহলে বলা যায় এখানে নির্মাণের কোয়ালিটিতে গাফিলতি আছে। কাজ আদায়ে সরকারি এজেন্সিগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কোয়ালিটি নিশ্চিত করে ঠিকাদারকে বিল দিতে হবে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে গত বছরের জুনে করা সবশেষ পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনেও এলডিডিপির বিভিন্ন প্রকল্পে উঠে এসেছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা।