উৎপাদনে ফিরছে পটুয়াখালী তাপ বিদুৎ কেন্দ্র

পটুয়াখালি
  © সংগৃহীত

পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ। কমিশনিং, টেস্টিং শেষে আগামী বছরের মার্চে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং মে থেকে একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। 

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। সেই সঙ্গে কমবে উৎপাদন ব্যয়। 

নতুন এই কেন্দ্রটি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার উত্তরে রামনাবাদ নদীর তীরে অবস্থিত। প্রায় ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এজন্য সেখানে ৯৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। 

আধুনিক প্রযুক্তির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল)। যৌথ বিনিয়োগে গঠিত আরএনপিএল কোম্পানিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের (নরিনকো) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।

কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিদ্যুকেন্দ্রের একটি ইউনিট উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এটি চালু করতে এখন ব্যাকফিড পাওয়ার প্রয়োজন। সেজন্য পিজিসিবির পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন শাটডাউন (বন্ধ) করতে হবে। ডিসেম্বরের ১৫ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনটি বন্ধের অনুমতি মিলেছে। তখন ব্যাকফিড পাওয়ার পাওয়া যাবে। 

তিনি বলেন, ‘এরপর কমিশনিং ও টেস্টিংয়ের জন্য ৬০ থেকে ৭৫ দিন সময় লাগবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ইউনিট এবং একই বছরের মে মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছি।’

পিডিবি এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষে টেস্টিং কমিশনিংয়ের জন্য জুন-জুলাইয়ে প্রস্তুত ছিলো। এজন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি অন্তত ৮ দিনের জন্য বন্ধ করতে হতো। এতে বিসিপিসিএলের পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হতো। তখন দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা বেশি থাকায় পিডিবি বলেছিল আরও কিছুদিন পর কমিশনিং করতে। 

কারণ তখন কেন্দ্র দুটি বন্ধ করা হলে দেশে ব্যাপকহারে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা ছিল। এরপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ১  থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আবার ওই লাইনের শাটডাউন চাওয়া হয়। কিন্তু সেটিও সম্ভব হয়নি, কারণ তখন বকেয়া আদায় করতে ভারতের আদানী গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিলো। এমনকি বন্ধেরও হুমকি দিয়েছিল। 

এছাড়া কয়লা সংকটসহ নানা জটিলতায় মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের পাশাপাশি রামপাল ও বাঁশখালির এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমে অর্ধেকে নামে। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ব্যাকফিড পাওয়ারের অনুমোদন মেলে।

বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৫ হাজার ৬৮৩ মেগাওয়াট। আরপিসিএল-নরিনকোর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা যুক্ত করলে দেশে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা দাঁড়াবে ৭ হাজার মেগাওয়াটে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার মজুদের বিষয়ে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ৮৫ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ করলে দুই ইউনিটের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। 

ইতোমধ্যে ১০ লাখ টন কয়লা সরবরাহের জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ইয়ানতাইয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় ১ লাখ ২৮ হাজার টন কয়লা এরইমধ্যে সরবরাহ করেছে তারা। জানুয়ারিতে আরও কয়লা আসবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানি করা হবে। 

তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে ইন্দোনেশিয়ার উন্নতমানের কয়লা ব্যবহার করা হবে এই কেন্দ্রে। এটি একটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখানে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

বিদ্যুতের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদানি, রামপাল, বাঁশখালি ও অন্যান্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় এই কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় কম হবে। তবে পাওয়ার সঙ্গে তুলনায় এই দাম কাছাকাছি থাকবে। অর্থাৎ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। বর্তমান কয়লার দাম (৭৭ ডলার) বিবেচনায় নিলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সবমিলে গড়ে ৯ টাকা ৮৫ পয়সার মতো হতে পারে।