শুল্ক ইস্যুতে ট্রাম্পের কাছে ৩ মাসের সময় চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ PM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ PM
-10714.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) তিনি এই মর্মে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, চিঠিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তিন মাস সময় চেয়েছেন, যাতে বাংলাদেশ আমদানি বৃদ্ধি এবং শুল্ক কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
চিঠিতে ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন, আপনার ক্ষমতা গ্রহণের অব্যবহিত পরেই আমি আমার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি প্রেরণ করে জানিয়েছিলাম যে, ১৭ কোটি মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। এই উদ্যোগ গ্রহণকারী প্রথম দেশ ছিল বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশ সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এলএনজি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ এলএনজিভিত্তিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, বিশেষত তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা আমেরিকান কৃষকদের আয় এবং জীবিকার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দ্রুত বাজারে এসব পণ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে, যেখানে এই পণ্যগুলো শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার লাভ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন শুল্ক ধার্য করা হয়। তুলা, স্ক্র্যাপ লোহা ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক শূন্য রাখার অঙ্গীকারের পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষা ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা হ্রাস করা, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের মানদণ্ড সরলীকরণ, শুল্ক প্রক্রিয়া সহজ করা এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণ করা।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই দেশে মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক চালুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এর ফলস্বরূপ, নাগরিক প্রযুক্তি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা আশা রাখি, আগামী তিন মাসের মধ্যেই এই পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ভারসাম্য তৈরির প্রক্রিয়া শেষ করব।’
চিঠির শেষ অংশে তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত পালটা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়টি সদয় বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের এই অনুরোধটি মঞ্জুর করবেন।’