জব্দ হওয়া একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন; প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা

ব্যাংক
  © ফাইল ছবি

প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য এইচবিএম ইকবাল দীর্ঘদিন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রভাব খাটিয়ে তিনি সম্প্রতি ব্যাংক হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংককে অর্থদণ্ড দিয়েছে, কারণ তারা অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এইচবিএম ইকবাল, তার পরিবারের সদস্য এবং তাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে। এসব স্থগিত হিসাব থেকে সাধারণত কোনো অর্থ উত্তোলন করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু সেই নিয়ম ভেঙেই তিনি প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোলন করেছেন।

এ ঘটনায় প্রিমিয়ার ব্যাংককে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২৩(৬) ধারা অনুযায়ী জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো হিসাব জব্দ বা স্থগিত করার পর ব্যাংক যদি সেই নিষেধাজ্ঞা মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সমপরিমাণ জরিমানা দিতে হবে। তাই, এইচ বি এম ইকবাল যেসব অর্থ উত্তোলন করেছেন, সেই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংককে দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএফআইইউ’র শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে আজই চিঠির মাধ্যমে প্রিমিয়ার ব্যাংককে জানানো হয়েছে। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এইচবিএম ইকবাল প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন। তবে ব্যাংকটি এখনো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান তার ছেলে ইমরান ইকবাল।

জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে এইচবিএম ইকবাল, তার দুই স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। এরপরও এইচ বি এম ইকবাল তার নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোলন করেন। এটি বিএফআইইউর নজরে আসার পর ব্যাংকটির কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এই কারণে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের ২৩ এর ৬ ধারা অনুযায়ী প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইনের ওই ধারায় বলা আছে, কোনো হিসাব জব্দ বা স্থগিত করার পর সেটি মানতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে স্থিতির সমপরিমাণ জরিমানা করা যাবে। তাই এইচবিএম ইকবাল জব্দ ব্যাংক হিসাব থেকে যে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন, প্রিমিয়ার ব্যাংককে সেই পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বিএফআইইউ একটি স্বতন্ত্র ও তদন্তকারী সংস্থা। তাই সংস্থাটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’

প্রিমিয়ার ব্যাংক সূত্র জানায়, ইকবাল তার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে থাকা পুরো টাকা ও ডলারই উত্তোলন করেছেন। গত আগস্টে সরকার বদলের পর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দুবাইয়ে চলে যান। তার পরিবার–ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এইচবিএম ইকবাল। সেখানে কাচের কারখানা ও তারকা হোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের।

এইচবিএম ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নানা অনিয়মের। গত অক্টোবর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তিন সন্তানকে বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দুদকের অভিযোগ অনুসারে, তিনি এবং তার পরিবার একাধিক দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য বিপুল পরিমাণ অপ্রতিষ্ঠিত সম্পদ অর্জন করেছেন।