নতুন শিক্ষাক্রমে আস্থা নেই অভিভাবকদের, ষড়যন্ত্র বলছে মন্ত্রণালয়

শিক্ষা
  © লোগো

নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ পদ্ধতির ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ অভিভাবকের। বিরোধিতা করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনও হচ্ছে। অভিভাবকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তাদের সন্তান আদৌ কিছু শিখছে না, ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তারা। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুলসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা। তবে এ বিরোধিতার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তাদের দাবি, কোচিং সেন্টারের মালিক ও নোট-গাইডের ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থেই একশ্রেণির অভিভাবককে ভুল বুঝিয়ে মাঠে নামিয়েছেন, উস্কানি দিচ্ছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও যুক্ত হয়েছে। যদিও সাধারণ অভিভাবকদের দাবি– কারও উস্কানি নয়, জেনেবুঝেই আন্দোলন করছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে স্কুলে স্কুলে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকারি প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।

গত জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। আগামী বছর আরও তিনটি শ্রেণিতে হবে এ কার্যক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত মূল্যায়ন পদ্ধতি তথা পরীক্ষা পদ্ধতি নেই। একাধিক অভিভাবক বলেছেন, শিক্ষার্থীরা পড়বে, মুখস্থ করবে ও পরীক্ষা দেবে। উত্তরপত্রে যা লিখবে, তার ভিত্তিতেই সে মূল্যায়িত হবে। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে শিশুরা কিছুই শিখতে পারছে না। মূলত অভিভাবকরা পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ক্ষুব্ধ। 

‘পরীক্ষাবিহীন’ পড়াশোনায় আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। এমনকি শিক্ষকরাও এ নিয়ে বিপাকে। রাজধানীর মনিপুর স্কুলের অভিভাবক আজিমুল হক আজিম বলেছেন, সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে-আসছে, কিছুই পড়ছে-লিখছে না। হোমওয়ার্ক, প্রাইভেট টিউশনিও চাইছে না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যা শিখছে, বাড়িতে যা করছে, সেটিকে আর যা-ই হোক ‘পড়াশোনা’ বলা যায় না।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক আইনজীবী জাফর আহমেদ বলেন, স্কুলে ডিম ভাজি ও ভাত রান্না শেখানো হচ্ছে। আমরা তো সন্তানদের স্কুলে রাঁধুনি বানাতে পাঠাইনি। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম ও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের দুটি পাঠ্যবই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে– এমন অভিযোগ তুলে গত ২৩ অক্টোবর মতিঝিল থানায় মামলা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবির সচিব নাজমা আখতার বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার রুখতে মামলা করা হয়েছে। আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপপ্রচারে যুক্তদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে অপপ্রচারে নেমেছে বলেও অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত না হতে অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত বৃহস্পতিবার মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় তিন কর্মদিবসের মধ্যে সরকারি বক্তব্যের প্রচারপত্র বিলি করতে বলা হয়। নির্দেশনাটি মাউশির ৯ অঞ্চলের উপপরিচালক, সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সব প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়েছে।

‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না’– শিরোনামে দুই পৃষ্ঠার প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট নাগরিক তৈরির বিকল্প নেই। স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গবেষণা, অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় ও বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনার পর রূপরেখার খসড়া তৈরি এবং ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন নিয়ে ২০২২ সালে পাইলটিং হয়। এরপর চলতি বছর থেকে ধাপে ধাপে শুরু হয়ে ২০২৭ সালে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।

এতে আরও বলা হয়, পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না– এটি মিথ্যাচার। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এসব বলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, সক্রিয়ভাবে পড়বে ও শিখতে পারবে। শুধু জ্ঞান নয়, দক্ষতাও অর্জন করবে। মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজ; ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন থাকবে। পরীক্ষা ঠিকই থাকছে। কিন্তু পরীক্ষা ভীতি থাকছে না। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী, তরুণ শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবকরা খুশি। অখুশি কেবল কোচিংয়ের শিক্ষকরা। ব্যবসায়িক স্বার্থেই তারা অপপ্রচারে নেমেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে একটি গোষ্ঠীও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মিথ্যাচার করছে। একইভাবে রান্নার বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে বছরে শুধু একদিন পিকনিকে গিয়ে রান্না শিখবে শিক্ষার্থীরা।


মন্তব্য