প্রাথমিকের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী পাবে পুষ্টিকর খাবার; তালিকায় যা যা থাকছে

প্রাথমিক
  © সংগৃহীত

দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিকের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচদিন পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের দুধ, ডিম, মৌসুমী ফল, কলা, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কেক ও বনরুটি দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৫০টি উপজেলার ১৮ থেকে ১৯ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

আগে রান্না করা খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবার শুকনা পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে চার হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি স্কুল ফিডিং কার্যক্রম-১ হাতে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এসংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকীর নেতৃত্বে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। সভায় একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি অনুমোদন না করে ‘এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত ও কার্যকর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

তারই আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন ডিজাইনে এই প্রকল্পটি পাঠিয়েছে। প্রকল্পটিতে চার হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে, আর ৪৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দেবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ওয়ার্ল্ভ্র ফুড প্রগ্রাম (ডাব্লিউএফপি)। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বিবিএসের দারিদ্র্য ম্যাপ দেখে সে অনুযায়ী ১৫০টি উপজেলার প্রায় ১৮ থেকে ১৯ হাজার স্কুল বাছাই করা হয়েছে। উপজেলার সব স্কুলের বাচ্চা খাবার পাবে। খাবার এমনভাবে পরিবেশন করা হবে, যাতে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হয়। তিনটি ধাপে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিতরণের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা। এর মাধ্যমে যাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমে, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়—এটিই উদ্দেশ্য।

প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে চার হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে খাবার ক্রয় করা হবে। খাবার ব্যবস্থাপনায় খরচ হবে ২৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ডাব্লিউএফপির ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে ব্যয় হবে। ২১ হাজার মিল ম্যানেজারের সম্মানী বাবদ ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকা। খাবার বিতরণে চার লাখ ২০ হাজার অ্যাপ্রন ও রুমাল কিনতে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা। ৩১৫ জনকে আউটসোর্সিংয়ে  নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা। অফিস ভাড়া বাবদ খরচ হবে ১০ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরুর কথা বলেছিলেন। এর আগে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩৫টি জেলার ১০৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য চলমান স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সম্প্রতি শেষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।


মন্তব্য