তাপপ্রবাহের মধ্যে শিশুদের ক্লাস

গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, কী বলছেন অভিভাবকরা?

তাপপ্রবাহ
  © ফাইল ছবি

টানা ২৭ দিন ধরে দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে চলতি মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে দেশবাসী। তিন দফার পর নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তীব্র গরমে ইতোমধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন মারা গেছেন। এই অবস্থার মধ্যেই আজ থেকে শুরু হয়েছে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেলায় কিছুটা যৌক্তিক মনে করলেও প্রচণ্ড এই গরমের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিশুদের ক্লাসে পাঠানোর বিরোধিতা করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, আরও এক সপ্তাহ সরাসরি ক্লাস বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস করাতে পারত সরকার। স্কুলে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী হিট স্ট্রোকে মারা গেলে এর দায় কে নেবে?

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিকা রহমান। সকাল ৭টায় তার ক্লাস শুরু হয়ে ৯টা ৪০ মিনিটে ছুটি হয়েছে। ছুটি শেষে এই কোমলমতি শিক্ষার্থী বমি করে এবং কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা অভিভাবক মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যার কারণে বাসায় গিয়ে মেয়ের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আগামীকাল স্কুলে দেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শুধু শিক্ষার্থী সাদিকাই নয়, তার মতো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষার্থী গরমের মধ্যে ক্লাস করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যার কারণে অভিভাবকদের দাবি, গরমের এই তীব্রতার মধ্যে স্কুল বন্ধ কিংবা অনলাইনে ক্লাস নিলে সেটি ভালো হয়।

আরও পড়ুন: নতুন করে ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি

সাদিকা রহমান জানায়, অনেক গরম। ক্লাস করার সময় আমার অনেক খারাপ লেগেছে। পরে আমি বমি করে দিয়েছি। স্কুল বন্ধ করে দিলে ভালো হয়।

এই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. ফাইক। এই শিশু শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসরুমে অনেক গরম। অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ রুমে এসি নেই।

মো. ফাইকের মা বলেন, এই গরমের মধ্যে আমি তাকে বাইরে বের হতে দেইনি। আজকে প্রথম ক্লাস করেছে ও। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে গরমে। এই গরমে শিশুদের বমি হওয়াটা স্বাভাবিক। এখন বাসায় যাওয়ার পর তার কী অবস্থা হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করে স্কুলে আগামীকাল আনবো কিনা সিদ্ধান্ত নিবো।

এই অভিভাবক বলেন, আমি মনে করি করোনাভাইরাসের সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, এখনও গরমের মধ্যে একই নিয়মে ক্লাস হতে পারে। তারপর পরিস্ত যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে তখন আবার সরাসরি ক্লাস হতে পারে।

আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মনিকা দাস। তার বাবা সুব্রত দাস বলেন, এই গরমে বড়রা টিকতে পারে না। সেখানে বাচ্চারা কীভাবে ক্লাস করে ভাবতে কষ্ট লাগে। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ক্লাস শেষে সবসময় খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। আজ সে গরমের মধ্যে ক্লাস করে এতো ক্লান্ত বোধ করছে যে খেলাধুলা না করে বের হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে।

এই অভিভাবক বলেন, আমি মনে করি আরও কিছুদিন স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে হয়তো কিছুটা ক্ষতি হবে। তারপরও আমরা অভিভাবকরা বাসায় সময় দিয়ে, শিক্ষক রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবন অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। শিগগিরই তাপমাত্রা কমবে এমন আভাস দিতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তরও। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। এ অবস্থায় অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না।  এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেখানে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে হিট অ্যালার্ট জারি করায় আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরাও আরও এক সপ্তাহ স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস করানোর দাবি করেছি। কিন্তু সরকার তা শোনেনি। এরপর যদি কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয় এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য। কিন্তু এই গরমের মধ্যে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখা উচিত ছিল। গরমের কারণে উপস্থিতি কম হতে পারে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ