এসএসসির ফলাফলে দুই মেয়েকে ছাড়িয়ে গেলেন বাবা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৭ PM , আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৭ PM

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দুই মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বাবা জয়নাল আবেদীন (৪৪)। পরে ফলাফলে দুই মেয়ের একজন কৃতকার্য এবং অপরজন অকৃতকার্য হলেও বাবা জয়নাল ফলাফলে এগিয়ে।
জানা যায়, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় ভোকেশনাল শাখা থেকে বাবা জয়নাল পোল্টি রিয়ারিং এন্ড ফার্মিং বিষয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৬ পেয়েছেন। আর বড় মেয়ে জেসমিন আক্তার ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক শাখা থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৩ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছেন। এছাড়া তার আরেক মেয়ে আছিয়া খাতুন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন।
জয়নাল আবেদীন উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ফুলমালীরচালা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফুলমালীরচালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর দুই মেয়ে উপজেলার ফুলমালীরচালা ছাকেদ আলী হাইস্কুল এন্ড কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও জয়নাল আবেদীনের এক ছেলে রুহুল আমিন দ্বিতীয় শ্রেণি, মেয়ে বর্ষা ষষ্ঠ শ্রেণি ও সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে স্থানীয় রাশেদ মডেল স্কুলে পড়াশোনা করছে।
বড় মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, বাবা-মেয়ে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, এটি খুবই আনন্দের। আমাদের চেয়ে বাবা ফলাফলে এগিয়ে। তবে ছোট বোন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আনন্দ কিছুটা কম। তারপরও ভালো লাগছে যে বাবা পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়ে পাস করেছে। বাবার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা বাবার সফলতায় আনন্দিত।
এসএসসি পাস করা জয়নাল আবেদীন বলেন, ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর সৌদি আরবে ৫ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসি। পরে ২০০১ সালে বিয়ে করে সংসারজীবন শুরু করি। কিন্তু বুকের ভেতরে পড়াশোনা করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝেমধ্যেই আমাকে পীড়া দিত। লোকলজ্জার কারণে পড়াশোনা হয়ে উঠছিল না। পরে ২০২০ সালে ফুলমালীরচালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসায় ভোকেশনাল শাখার পোল্টি রিয়ারিং এন্ড ফার্মিং ট্রেড শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই এবং এ বছর মেয়েদের সঙ্গে আমিও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। মেয়েরা আমাকে উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছি।
ফুলমালীরচালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর কাদের বলেন, ৪৪ বছর বয়সে এসে এসএসসি পাস করায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। পড়াশোনায় বয়স কোনো বাধা নয়, এটি জয়নাল আবেদীন প্রমাণ করছেন যা অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।