২০২২ সালে বলিউডের ৩৯ সিনেমাই ফ্লপ
- বিনোদন মোমেন্টস
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৮ PM , আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৮ PM

২০২২ সালটা মোটেই ভালো গেল না বলিউডের। এই বছর বলিউড মাত্র পাঁচটি ব্লকবাস্টার দিয়েছে। ‘দৃশ্যম ২’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’, ‘কেজিএফ ২’ (হিন্দি), ‘কান্তারা’ (হিন্দি)- এই ছবিগুলো একমাত্র বক্স অফিসে ভালো সাড়া পেয়েছে। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াডি’ ছবিগুলো হিট করেছিল বক্স অফিসে।
কিন্তু আচমকাই বলিউডের এমন করুন দশা হল কেন? এটা কি মহামারীর সাইড এফেক্ট? ট্রেড অ্যানালিস্ট করণ তৌরনি জানান, ‘২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া মাত্র ১২-১৪ শতাংশ ছবিই বক্স অফিসে হিট করেছিল। আর বাকি সব ছবিই হতাশ করেছে। মহামারীর আগে যেখানে হিন্দি ছবির মোট বক্স অফিস কালেকশন ছিল ৪০০০ কোটি টাকা সেটাই ২০২২ সালে মহামারীর পর কমে হয়েছে ৩০০০-৩২০০ কোটি টাকা মতো। যদিও অনেকটাই রিকভার করেছে বলিউড। কিন্তু তবুও বলব হিন্দি ছবির যোগদান খুব কমে গিয়েছে। এই ৩২০০ কোটির মধ্যে ৮০০ কোটির মতো এসেছে আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলি থেকে। যেমন ‘আরআরআর’, ‘কেজিএফ ২’, ইত্যাদি। ফলে এগুলো বাদ দিলে হিন্দি ছবির নিজের অংশ হচ্ছে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ।'
কিন্তু কেন এমন অবস্থা হচ্ছে বলিউডের? করণ জানান, বলিউডের কনটেন্টগুলো দর্শকদের পছন্দ হচ্ছে না। একই মত তোরণ আদর্শের। তিনি বলেন, '২০২২ সালটা সব থেকে খারাপ গেল। একটাও কনটেন্ট চলেনি। মহামারীর পর দর্শকদের পছন্দ একটা আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ এখন বুঝে গিয়েছে তাঁরা কোনটা হলে বসে দেখতে চান আর কোনটা ঘরে বসে ওটিটিতে।'
তবে এই বিষয়ের সঙ্গে কিন্তু মোটেই এক মত নব পরিচালক মিলাপ জাভেরি। তিনি বলেন, '২০২০-২১ বছর দুটো সবথেকে খারাপ গিয়েছে। ওই দুই বছর কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। পেলেও চলেনি। সেখানে এই বছর একাধিক ছবি বক্স অফিসে ভালো করেছে।' তিনি এই প্রসঙ্গে দ্য কাশ্মীর ফাইলস, ভুল ভুলাইয়া ২, ইত্যাদির নাম করেন।
একই দিকে বলিউডের এই খারাপ দশার জন্য ওটিটিকে দায়ী করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন যেহেতু বাড়ি বসে ছবি দেখতে পাচ্ছেন বলেই অনেকে হলে যেতে চাইছেন না। এই প্রসঙ্গে করণ বলেন, 'ওটিটি একটা ফ্যাক্টর বটে। কিন্তু আসল ফ্যাক্টর হল কনটেন্ট। আগে প্রতি তিন মাস অন্তর ২০-২২ টা করে ছবি মুক্তি পেত বড়পর্দায়। এখন ১৫-১৭টা ছবিও মুক্তি পায় না। আগে ৪-৫ ছবিই ১০০ কোটির ব্যবসা করে ফেলত, এখন সেটা ২০-২২টা ছবি মিলিয়ে হচ্ছে। আগে অনেক ছোট বাজেটের ছবিও ভালো সাড়া পেয়েছে, সেখানে বড় বাজেটের ছবিগুলো অন্তত ৫০-১০০ কোটির ব্যবসা করত। কিন্তু এখন তো ছবিগুলো মহামারীর আগে যা ব্যবসা করত সেটুকুও করতে পারছে না।'
শুধু তাই নয়, তারকাদের নিয়ে যে মাতামাতি, উন্মাদনা সেটাও কমে গিয়েছে। অক্ষয় কুমার, শাহিদ কাপুর, অজয় দেবগন, প্রমুখের যে খ্যাতি ছিল সেটা কোথাও যে এই এখন কমছে বা তার প্রভাব বক্স অফিসে দেখা যাচ্ছে না। তোরণ আদর্শের মতে, 'তারকারা তাঁদের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছেন। তারকার নাম দেখে দর্শকরা এখন আর হলে আসে না। আর সেটা বরুণ ধাওয়ানের ভেড়িয়া, রণবীর সিংয়ের সার্কাস দেখেই বোঝা গিয়েছে।'
শুধু তাই নয়, দক্ষিণী ছবির রমরমা বাড়ছে। আরআরআর, কান্তারা, পন্নিয়িন সেলভান, ইত্যাদি ছবি মানুষের থেকে দারুন সাড়া পেয়েছে। এই ধরনের স্ক্রিপ্ট দর্শকরা নিচ্ছে। একদিকে যখন বলিউড ডুবছে, তখন আরেকদিকে দক্ষিণী ছবিগুলো দর্শকদের থেকে ভালোবাসা পাচ্ছে। এই বিষয়ে তোরণ বলেন, ' ওঁরা গোটা ভারতের দর্শকদের জন্য ছবি বানাচ্ছেন। ওঁদের ছবির গল্পের শিকড় ভারতের সঙ্গে জুড়ে, যা মানুষ রিলেট করতে পারছেন।' কোমল নাহতা জানিয়েছেন, 'দক্ষিণ বরাবর নতুন নতুন টপিকের উপর কাজ করে এসেছে। এখনও তাই করছে।'
একাধিক ছবি আবার সোজাসুজি ওটিটিতে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ফলে সবটা মিলিয়েই বলিউডের তথৈবচ অবস্থা। এখন এটাই দেখার পালা যে ২০২২ এর শিক্ষা নিয়ে বলিউড ২০২৩ সালে ঘুরে দাঁড়ায় কিনা।