ন্যান্সির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অলংকার নিয়ে উধাও গৃহকর্মী

বিনোদন
  © সংগৃহীত

কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির দুটি সোনার চেইন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ডায়মন্ডের লকেটসহ মূল্যমান অলংকার চুরি করে নিয়ে যান বাসার দুই গৃহপরিচারিকাসহ তিনজন। যার বাজারমূল্য তিন লাখ ২১ হাজার টাকা। এ ঘটনায় করা মামলার সত্যতা পেয়ে দুই গৃহপরিচারিকাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন রাজধানীর গুলশান থানা পুলিশ। পুলিশের দেওয়া চার্জশিটটি আমলে নিয়ে নিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদুল আলম। মামলার শুরু থেকে পলাতক থাকায় গৃহপরিচারিকা রিপার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি হঠাৎ দেখতে পান আলমারিতে রাখা তার দুটি সোনার চেইন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ডায়মন্ডের লকেটসহ মূল্যমান অলংকার নেই। এ ঘটনায় ২৭ এপ্রিল ন্যান্সির ভাই শাহরিয়ার আমান সানি বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনিন্দ তালুকদার তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ন্যান্সির বাসার গৃহপরিচারিকা তাহমিনা, রিপা এবং শাকিলকে (তাহমিনার স্বামী) আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে রিপা পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে পুলিশ।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামি তাহমিনা ওই বাসার কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ন্যান্সি হঠাৎ একদিন দেখতে পান আলমারিতে রাখা তার এক ভরি ওজনের দুটি সোনার চেইন, এক ভরি ওজনের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের একটি মেডেল এবং একটি ডায়মন্ডের লকেট, একটি রাউন্ড ফিগার রিং ও পাঁচ আনার দুই জোড়া কানের দুলসহ মোট তিন লাখ ২১ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ঘটনায় রিপা, তাহমিনা ও শাকিলকে সন্দেহভাজন মনে হলে তাদের বিরুদ্ধে ন্যান্সির ভাই বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় ঘটনার সত্যতা পেয়ে নিপা, তাহমিনা ও শাকিলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৮১ ধারায় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

হমিনা ওই বাসার কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ন্যান্সি হঠাৎ একদিন দেখতে পান আলমারিতে রাখা তার এক ভরি ওজনের দুটি সোনার চেইন, এক ভরি ওজনের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের একটি মেডেল এবং একটি ডায়মন্ডের লকেট, একটি রাউন্ড ফিগার রিং ও পাঁচ আনার দুই জোড়া কানের দুলসহ মোট তিন লাখ ২১ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ন্যান্সির বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তাহমিনা ও রিপা। তাহমিনাকে বাসা থেকে নিতে আসতেন শাকিল (তাহমিনার স্বামী)। গত বছরের ৫ এপ্রিল তারা বাসার কাউকে না জানিয়ে চলে যান। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রিপাও বাসার কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যান।

এ বিষয়ে গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই শাহ আলম বলেন, কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির বাসা থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সোনা ও ডায়ামন্ডের অলংকার চুরির মামলার গত ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ন্যান্সির বাসার গৃহপরিচারিকা তাহমিনা, রিপা ও শাকিলকে (তাহমিনার স্বামী) আসামি করা হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ) আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ করে রিপার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার অন্য দুই আসামি তাহমিনা ও তার স্বামী শাকিল জামিনে রয়েছেন।

বাদী শাহরিয়ার আমান সানি বলেন, ন্যান্সির বাসা থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অলংকার চুরি অভিযোগে একটা মামলা করি। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।

রিপা কাজ ছেড়ে চলে গেলে মিনার বড় বোন তাহমিনা ওই বাসায় কাজ নেন। মিনার বড় বোন হিসেবে শুরু থেকেই তাহমিনার ওপর বিশ্বাস রাখেন ন্যান্সি। কিন্তু ৫ এপ্রিল তাহমিনা হঠাৎ জানায়, তার শরীর ভালো নেই, সে আর কাজ করবে না। ন্যান্সি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বললেও তাহমিনা জানায়, তাকে নাকি ভূতে পেয়েছে। এজন্য আর বাসাবাড়িতে কাজ করবে না। তখনো চুরির ঘটনা অনুমান করতে পারেননি ন্যান্সি

এ বিষয়ে কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বলেন, একটা ব্যাপারেই আমার দুঃখ যে, আমি কিছুই আচ করতে পারিনি। এই মেয়েটাই বা তার বোন এগুলো নিয়েছে এমন কিছুও আমি বলিনি। গয়না তো অবশ্যই একটা বিষয়। আমার যে সম্মাননার মেডেলটা নিয়ে গেছে এটা তো আমি কোটি টাকা দিয়েও আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। এটা কিন্তু ওর ছোট বোনই (তাহমিনার বোন মিনা) পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে বলছে যে, কীভাবে এগুলো আলমারি থেকে ময়লার নিচে করে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ন্যান্সির বাসায় আগে যে মেয়েটি কাজ করত তার নাম রিপা। ন্যান্সির ছোট সন্তানকে দেখভাল করতো মিনা নামের আরেকটি মেয়ে। গত বছরের মার্চে রিপা কাজ ছেড়ে চলে গেলে মিনার বড় বোন তাহমিনা ওই বাসায় কাজ নেন। মিনার বড় বোন হিসেবে শুরু থেকেই তাহমিনার ওপর বিশ্বাস রাখেন ন্যান্সি। কিন্তু ৫ এপ্রিল তাহমিনা হঠাৎ জানায়, তার শরীর ভালো নেই, সে আর কাজ করবে না। ন্যান্সি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বললেও তাহমিনা জানায়, তাকে নাকি ভূতে পেয়েছে। এজন্য আর বাসাবাড়িতে কাজ করবে না। তখনো চুরির ঘটনা অনুমান করতে পারেননি ন্যান্সি।

এই কণ্ঠশিল্পী জাগো নিউজকে বলেন, তখন আমি পুলিশকে বলেছি যে আপনারা এই মেয়েটাকে (তাহমিনা) ধরেন। তখন পুলিশ বলছিল, মানবিক দিক বিবেচনা ভয় দেখিয়ে তথ্য উদ্ধার ও আপস করা যায় কি না। পুলিশের কথা মতো এরপর আমি ১৫/২০ দিন দেখলাম। কিন্তু আমাদের মুখের কথায় তাদের (আসামিদের) কিছুই হয় না। ওরা উল্টো আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করে, এসব জিনিস জ্বিন-পরী এসে নিয়ে গেছে। তারা এসে দিয়েও যাবে।

ন্যান্সি বলেন, আমার শুধু একটা জায়গায় ক্ষোভ যে পুলিশ এখনো জবানবন্দি দেওয়া মেয়েটাকে (মিনা) আটক করেনি। মিনাকে যখন ছেড়ে দেওয়া হলো, তখন দুই বোন একসঙ্গে কান্নাকাটি করে বললো আমি নাকি তাদের ভয় দেখিয়েছি। আমার আরেকটা জায়গাতেও কষ্ট, আমি সব গহনা নিয়ে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডটা ফিরিয়ে দিতে বলেছিলাম। আমার ধারণা, পুলিশ ওই মেয়েটাকে (মিনা) ধরলে ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে যেতো।


অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মী নির্যাতন হয়, সেটার বিচারও হয়, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কখনো কখনো গৃহমালিকরা হয়রানির শিকার হন। সেজন্য বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখতে হয়। নইলে যে কোনো সময় গৃহকর্মী বলে ফেলতে পারে, তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব বলে কেউ কেউ গৃহমালিকদের ব্ল্যাকমেইলও করে

আপনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ন্যান্সি বলেন, এটাই কি উচিত নয়! অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মী নির্যাতন হয়, সেটার বিচারও হয়, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কখনো কখনো গৃহমালিকরা হয়রানির শিকার হন। সেজন্য বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখতে হয়। নইলে যে কোনো সময় গৃহকর্মী বলে ফেলতে পারে, তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব বলে কেউ কেউ গৃহমালিকদের ব্ল্যাকমেইলও করে।

এই কণ্ঠশিল্পী আরও বলেন, গৃহকর্মীদের নির্যাতন করা অবশ্যই অন্যায়। কিন্তু কথা হচ্ছে ওদের নির্যাতন করা যদি অন্যায় হয়, তাহলে ওরা যে এমন মূলবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়ে যায় সেটা কি অন্যায় নয়? আমরা তো গৃহকর্মীদের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা করে বাসায় বাচ্চাসহ অনেক জিনিসপত্র রেখে যাই। তাহলে সেই ভরসাটা কোথায়। আর ভরসা করা ছাড়া বাসা থেকে বের হবো কীভাবে?

‘এখন ওরা (আসামিরা) নিজেদের দরিদ্র বলে পার পেতে চাচ্ছে। কিন্তু দরিদ্র আর চোর তো এক কথা নয়। বড়লোকও চোর হতে পারে, একইভাবে দরিদ্রও। চোর তো চোরই’- বলেন ন্যান্সি।

তথ্য: জাগোনিউজ২৪


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ