ঈদের রাতে যেভাবে নিজের ত্বকের যত্ন নিবেন!

রূপচর্চা
  © সংগৃহীত

রোজায় ব্যস্ততার কারণে অনেকেই নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়া সম্ভব হয় না। তার ওপর রোজায় খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের সময়ে পরিবর্তন ত্বকের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। অপর্যাপ্ত পানি পান, ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে ত্বকের লাবণ্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া কাঠফাটা রোদের তীব্রতা তো আছেই। তাই ঈদের দিন সতেজ ও সজীব ত্বক পেতে ত্বকের যত্ন নিন আজ রাতেই। 

চাইলে ভালো কোনো স্যালনে গিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে করিয়ে নিতে পারেন ফেসিয়াল। তবে ঈদ যেহেতু চলেই এসেছে তাই ঘরোয়া যত্ন টাই হবে বেস্ট।

রাতের রূপচর্চার ধাপগুলোতে যেসব পণ্য ব্যবহার করবেন, সেটা বাছাই করতে হবে ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী। সব ধরনের ত্বককেই পরিষ্কার করে নিতে হবে প্রথমে। সম্ভব হলে প্রথমে ফেস অয়েল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বক অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে তেল নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন ফেসওয়াশ বেছে নিন। তেমনি ত্বক শুষ্ক হলে মিল্ক ক্লিনজার আর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য প্রয়োজন মেডিকেটেড ক্লিনজার। এরপর আসবে স্ক্রাব ব্যবহারের পালা। বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন। টক দই আর ওটস মিশিয়ে বানানো স্ক্রাব সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই।

পরের ধাপে ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক করার জন্য টোনার লাগাতে হবে। বাড়িতে টোনার তৈরি করে নিতে পারেন শসার রস আর গোলাপজল মিশিয়ে। তুলার সহায়তায় লাগালে ত্বকের ওপর বাড়তি কোনো ময়লা থাকলে চলে যাবে। তবে টোনার কিন্তু ত্বক পরিষ্কারের জন্য নয়। ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী টোনার বেছে নিতে পারেন। পিগমেন্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট টোনার, ব্রণ থাকলে সেটার জন্য মানানসই টোনার ব্যবহার করতে হবে। টোনারকে ত্বকের ভেতরে যাওয়ার জন্য অন্তত ৬০ সেকেন্ড সময় দিন।

বলিরেখা রোধ করা, উজ্জ্বলতা বাড়ানো, ব্রণ কমানো বা ডার্ক স্পট কমানো—লক্ষ্য যেটাই থাকুক না কেন, সিরামটাও বেছে নিন সে অনুযায়ী। ত্বকের শুষ্কতা থেকে শুরু করে বলিরেখা রোধ করা পর্যন্ত যত রকম সমস্যা আছে ত্বকের, সব সমস্যার সক্রিয় সমাধান পাওয়া যাবে সিরাম থেকে।

ত্বক শুষ্ক হলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম, ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি বেছে নিতে পারেন, ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, এমন সিরাম দরকার ত্বকের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট ক্রিম লাগাতে হবে।

সকালে উঠে ত্বক কিন্তু আবার পরিষ্কার করে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, রাতে এত যত্ন নিলাম, সকালে কিছু না করলেও হবে। বিষয়টি একেবারেই উল্টো। সকালে মুখে পানি দিয়ে, দাঁত ব্রাশ করে বের হয়ে গেলেই হবে না। রাতে ত্বক থেকে যেই সিবাম বের হয়, সেটা দীর্ঘক্ষণ অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ত্বকের ওপর মিশে থাকলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা দেখা দেবে। এ কারণে সকালেও একই প্রক্রিয়ায় ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বাড়তি যুক্ত হবে সানস্ক্রিন।

                                                                          Korean Glass Skin | Viral beauty hacks to get perfect Korean glass skin  dgtl - Anandabazar

রূপচর্চায় এখন দারুণ জনপ্রিয় কোরিয়ান ধারা বা কে-ধারা। এই ধারায় ত্বকের এমন এক বিশেষত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যাতে ত্বক হয় মসৃণ আর ত্বকে আলোর প্রতিফলন ঘটে কাচের মতোই। এমন ত্বককেই বলা হয় ‘গ্লাস স্কিন’। তবে এসব কিন্তু মেকআপের কারসাজি নয়; বরং ত্বকের যত্ন এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, যাতে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র হয়ে ওঠে এবং সতেজ থাকে। গ্লাস স্কিন পেতে হলে ধৈর্য ধরে রোজ যত্ন নেওয়া জরুরি। সপ্তাহে একবার বিশেষ ফেসপ্যাকও লাগাতে হয়।

জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে একেক জনের ত্বক একেক রকম। কোরিয়া বা চীনের মানুষদের জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁদের ত্বকের ধরন আমাদের চেয়ে আলাদা। আবহাওয়ারও প্রভাব থাকে। পুরোপুরি তাঁদের মতো ‘লুক’ পাওয়া তাই বেশ মুশকিলই বটে। তাঁদের কাছাকাছি ধরনের ত্বক পেতে চাইলে তাঁদের যত্নআত্তির ধারাটা অনুসরণ করতে পারেন। এই নিয়মে যত্ন নিলে ত্বক সতেজ ও মসৃণ হবে। গ্লাস স্কিন পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। গ্লাস স্কিন পেতে কীভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে, জেনে নিন তাঁর কাছ থেকেই।

প্রথম ধাপ: ডাবল ক্লিনজিং

অয়েল বেজড ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন মিনিট পাঁচেক ধরে। এরপর পানি না লাগিয়ে ত্বক মুছে নিন। এবার জেল বেজড কিংবা ফোম বেজড ক্লিনজার প্রয়োগ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত পানিটা হাত দিয়ে সরিয়ে দিন। ত্বকে লেগে থাকা বাকি পানিটুকু মুখেই শুকাতে দিন।

দ্বিতীয় ধাপ: টোনিং

ত্বক আর্দ্র রাখবে, এমন টোনার বেছে নিন। তুলার বল বা হাতের আঙুল দিয়ে পাঁচ-সাতবার ত্বক মালিশ করুন বৃত্তাকার গতিতে। একই পদ্ধতিতে সরাসরি গোলাপজল কিংবা শসার রস প্রয়োগ করলেও তা টোনারের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তবে আর্দ্রতা দেবে, এমন টোনার কিনে নেওয়াই ভালো।

তৃতীয় ধাপ: এসেন্স প্রয়োগ

অ্যালোভেরা জেল বা একই ধরনের অন্য কোনো সুদিং জেল কিংবা যেকোনো একটা এসেনশিয়াল অয়েল প্রয়োগ করতে পারেন এই ধাপে। চাইলে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে সমপরিমাণ গ্লিসারিনও যোগ করে নিতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট পর ভেজা রুমাল দিয়ে ত্বক মুছে নিন কিংবা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চতুর্থ ধাপ: ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ

ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, লোশন কিংবা সেরাম লাগিয়ে নিন। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই–সমৃদ্ধ পণ্য বেছে নেওয়া ভালো।

পঞ্চম ধাপ: সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা

বাইরে গেলে (কিংবা চুলার তাপে, প্রচণ্ড গরমে বা অতিরিক্ত আলোতে কাজ করতে হলে) তার আগে সানস্ক্রিন পণ্য লাগিয়ে নিন। তবে তা ময়েশ্চাইরাইজার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই লাগানো যাবে না। চতুর্থ ধাপের ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ভালোভাবে মিশে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর চতুর্থ ধাপে যদি এমন ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা হয়, যাতে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর আছে, তাহলে পঞ্চম ধাপটি বাদ দিয়ে দিন।


মন্তব্য