গানের টাকা হারাম
আলী আহসানের সমালোচনাকারীদের জবাব দিয়ে শিবলী আহমেদের করা পোস্ট ভাইরাল
- বিনোদন ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ PM , আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ PM

‘ব্যবসার পরিস্থিতি’ গান দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন র্যাপার আলী হাসান। সম্প্রতি কোক স্টুডিও বাংলায় ‘মা লো মা’ গানে তাঁর পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়েছে। এবার গান নিয়ে আলী হাসানের এক বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলী হাসান বলেন, ‘গান–বাজনার টাকা হারাম। আমার অটো বিজনেসের টাকা হালাল। এ জন্য ব্যবসার টাকায় (হালাল আয়ে) বাজার সদাই করি, আর মিডিয়ার টাকায় বিল্ডিং তৈরি করছি।’
এমন বক্তব্যের পর নেটিজেনদের রোষানলে পড়েছেন আলী হাসান। শোবিজ অঙ্গনেরও অনেকেই তাঁর সেই বক্তব্যের ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। তবে আলী হাসানের দাবি, তাঁর বক্তব্য অনেকে বুঝতে পারেননি।
আলী হাসান বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছি, গানে যে বাদ্য-বাজনা ব্যবহার হয়, তা আমাদের ধর্মে হারাম। সেই কাজগুলো ছেড়ে দিতে চাই। এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকার থেকে দুই–তিন মিনিট কেটে ছেড়ে দেওয়ায় আমার কথাটি অনেকে বুঝতে পারছে না। পুরো ইন্টারভিউ দেখলে হয়তো আমার মনের কথাটা বুঝতে পারবেন সবাই। ছোট ছোট ক্লিপস দেখে কাউকে বিচার করবেন না। যদি আমার অসৎ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে এ বিষয়ে কথা বলতাম না।’
আলী হাসান আরও বলেন, ‘৫০ থেকে ৫৫ মিনিট একটানা কথা বলতে গেলে অনেক সময় জড়তা চলে আসে। দেখা গেছে, অনেক সময় প্রশ্নের উত্তরে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারিনি। আর যে কথাটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটা মজার ছলে বলেছি।’
সমালোচনার বিষয়ে আলী হাসান বলেন, ‘অনেকেই ট্রোল করছে। কিন্তু আমার কাছে এসব কোনো বিষয় না। মানুষ মাত্রই ভুল। আমার কথায়, আচরণে, চলাফেরায় ভুল হতেই পারে। হয়তো আমার মনের কথাটি গুছিয়ে বলতে পারিনি। হালাল খাই, হারামে থাকি—বিষয়টি এ রকম নয়। দুটি মিলিয়েই চলছি। কোক স্টুডিও বাংলার সঙ্গে কাজ করার পরেও অনেকে সমালোচনা করেছে। আমি কিন্তু বিষয়টাকে কাজ হিসেবে দেখেছি। অনেকে বুঝেছে, অনেকে বোঝেনি। তবে আমার আয়ের পথটা ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
এদিকে আলী আহসানের সমালোচনাকারীদের জবাব দিয়ে করা শিবলী আহমেদের একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
পোস্টে তিনি লেখেন, গানের টাকা হারাম— এই জাতীয় একটা কথা বলেছেন হিপহপ সিঙ্গার আলী হাসান। আবার ওয়ারফেজের কে যেন বলছে— মসজিদে আজান দিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে চাই। এসব বলার কারণে তারা ট্রল হচ্ছেন।
দেখুন, বেশির ভাগ মানুষের ভেতরে একটা ধার্মিক সত্ত্বা আছে। কিন্তু আপনারা আপনাদের ইকোনমিকে এমনভাবে সাজিয়েছেন, যেখানে হারাম বিষয়াদিতে টাকা উপার্জন করা সহজ, হালালে আয় রোজগার কম।
দুইটা আইটেম সং করলে লাখপতি হওয়া যায়। কিন্তু আইটেম সং সভ্যতার অগ্রগতিতে কোনো কাজেই লাগে না। এমনকি মানুষের জীবনে আইটেম সং-এর ন্যূনতম কোনো উপযোগিতা নেই। অথচ আপনাদের ইকোনমিতে আইটেম সং করলে অনেক টাকা পাওয়া যায়। অথচ যেই লোকটা রিকশা চালাচ্ছে, আপনাদের ইকোনমিতে সেই লোকটার আয় কম কিন্তু পরিশ্রম বেশি। জাস্ট একদিন চাকা না ঘুরলে সভ্যতা প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাবে, একদিন বিদ্যুৎ না থাকলে দুনিয়া পিছিয়ে পড়বে ন্যূনতম হাজার বছর। কিন্তু ড্রাইভার ও কারেন্টের মিস্ত্রীর উপার্জন ও মজুরি অত্যন্ত কম। আপনাদের এই হাস্যকর ইকোনমিতে ইনকাম কোথায় বেশি জানেন? ইনকাম বেশি— নাচে, গানে ও এসি রুমে বসে কলম খোঁচানো কেরানিগিরিতে এবং মহান পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে।
ট্রলটা আপনাদের ইকোনমি নিয়ে হওয়া উচিত। আলী হাসান বা ওয়ারফেজের উক্ত আজান-ইচ্ছুক ব্যক্তি মূলত আপনাদের ইকোনমির কাছে নিরুপায়। তাদেরও তো তিন তিন তলা বাড়ি করতে মন চায়। কিন্তু আপনারা আপনাদের ইকোনমি এমনভাবে সাজিয়েছেন যে 'হারাম' বিষয়ে না জড়িয়ে ইনকাম করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
এক দিকে মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে সঞ্চয় পত্র না কিনলে টাকা ডিম পাড়ছে না, ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তের পক্ষে সুদে না জড়িয়ে এক টুকরো জমি কেনা ইমপসিবল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জমি না কিনেও উপায় নেই। সে যদি সৎভাবে উপার্জন করে আপনার বাড়িতে ভাড়া থাকে তাহলে আপনি আপনার নাচ গান ও ঘুষের টাকা দিয়ে বানানো বাড়ির ভাড়া এতই বেশি রাখবেন যে বেচারার পুরো মাসের বেতনের তিন ভাগের দুই ভাগই যাবে আপনার পেটে। ফলে আপনার অত্যাচার থেকে বাঁচতেই জনসাধারণ জড়িয়ে পড়ে সুদি কারবারে। আর আলী হাসানরা নিজের ধর্ম ও আপনাদের ইকোনমি থেকে আয়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গিয়ে নিজের ইথিক্স জলাঞ্জলি দিয়ে হাসির পাত্র হয়।
তবে আমার হাসি আসে না, কারণ আমি জানি আলী হাসান ধর্ম পালন করতে চায়, কিন্তু আপনাদের ইকোনমি ধর্মপালন করে তিন তলা বাড়ি করার অনুকূলে নেই।