আন্দোলনের বিপক্ষে আলো আসবেই গ্রুপে সরব ছিলেন প্রাচী, ঊর্মিলা, সাবা
- বিনোদন ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ PM , আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের কিছু তারকা। আর যারা ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে 'আলো আসবেই' গ্রুপে।
ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরব ছিলেন অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর ও রোকেয়া প্রাচী। সরকারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিভিন্ন বার্তা প্রচারের চেষ্টা করেছেন তারা দু’জন। ‘আলো আসবেই’ গ্রুপেও দেখা মিলেছে তাদের সেই কর্মকাণ্ডের চিত্র।
এর মধ্যে ঊর্মিলা প্রতিদিনই কোথায় কোন তারকা শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন, সেসব চিত্র ওই গ্রুপে তুলে ধরতেন। রোকেয়া প্রাচী কখনো ভিডিওবার্তা নিয়ে হাজির হতেন, আবার কখনো রাজপথে সরকারের হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নেমে আসার আহ্বান জানাতেন।
সোহানা সাবাকেও একের পর এক স্ক্রিনশট শেয়ার করতে দেখা গেছে সেই গ্রুপে। এর মধ্যে ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সহশিল্পীদের নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন এই অভিনেত্রী।
তবে আলো আসবেই গ্রুপে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দেখা গেছে চিত্রনায়ক রিয়াজ ও নায়িকা অরুণা বিশ্বাসকে।
গত ২ আগস্ট রাত ১টা ৩০ মিনিটে ‘আলো আসবেই’ নামক শোবিজ অঙ্গনের আওয়ামীপন্থি শিল্পী ও সাংবাদিকদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চিত্রনায়ক রিয়াজ লেখেন, ‘প্রিয় বন্ধুগণ, সালাম ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের আজকের পারফরম্যান্স ও গ্রুপের কথা পড়ে শোকের মাসে জানাই অভিনন্দন। সেইসঙ্গে কিছু কথা— ১. আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে আলো আসবেই। ২. সময়টা আমাদের প্রতিকূলে। ৩. আমাদের যুদ্ধটা দীর্ঘ হবে এবার, তাই শক্তি ও মনোবল ধরে রাখতে হবে। ৪. এই সময়ে কাউকে আঘাত করে কিছু বলা যাবে না। ৫. যে কোনো মূল্যে এ আন্দোলন দ্রুত থামাতে হবে। ৬. সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যকে সাপোর্ট দিতে হবে। ৭. একজনের যেকোনো বিপদে সবাইকে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ৮. সবাই মিলে এক আত্মা এক প্রাণ হতে হবে। তাহলেই আমরা এই তুফান পাড়ি দিতে পারব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।’
একদিন পর ওই গ্রুপে আরও একটি বার্তা নিয়ে হাজির হন এই নায়ক। এবার ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রিয়াজ লেখেন, বিএনপি-জামায়াত আর রাজাকার পুত্ররা আহ্বান জানাচ্ছে, দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে। কোন দেশ সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। তাদের বাবারাও ৭১ সালে দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছিল। তবে সেটা বাংলাদেশ না, পাকিস্তান। আজ ৭১ মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে ২৪ দিয়ে। আগস্ট মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে জুলাই দিয়ে, গুজব ছড়িয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিকে ৭১-এর বদলে ২৪ এর বধ্যভূমি বানানোর চেষ্টা চলছে।
এরপর রিয়াজ আরও লেখেন, সরকার বিরোধী সব অপশক্তি যেখানে নানাভাবে সক্রিয় তখনও অনেকেই এটাকে শুধুমাত্র নিরপেক্ষ ছাত্র আন্দোলন ভাবতেই পারে, সেটা তাদের স্বাধীনতা। কিন্তু আন্দোলন প্যাটার্ন এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরাতন শকুনেরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত শিল্পী ও সাংবাদিকদের নিয়ে তৈরি সেই গ্রুপে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত এমন বেশ কিছু মেসেজ দিতে দেখা গেছে রিয়াজকে।
অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস যেন রিয়াজকে আরও একধাপ ছাড়িয়ে গেলেন। কখনো শিক্ষার্থীদের গায়ে গরম পানি ঢেলে দিতে বলেছেন। আবার কখনো আন্দোলনের পক্ষে যারা প্রোফাইল লাল করেছিলেন তাদের চিনে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে ‘সাইজ করার’ হুমকিও দিয়েছেন।
এখানেই থামেননি তিনি। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ‘হারামজাদা’, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়া, আবার শিল্পীদের স্ট্যাটাস-কর্মকাণ্ডে তুলে ধরে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে বলেছেন এই অভিনেত্রী।
এর মধ্যে ছাত্রদের পক্ষ নেওয়ায় একজন সংগীতশিল্পীকে উদ্দেশ্য করে অরুণা বিশ্বাসের একটি মেসেজ ছিল, ‘বয়স যদি কম থাকত, পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম।’
আওয়ামীপন্থি তারকা হিসেবে পরিচিত অভিনেত্রী জোতিকা জ্যোতি। ‘আলো আসবেই’ নামের সেই গ্রুপে তার উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে যেসব তারকা রাজপথে ছিলেন তাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে তার একটি বিতর্কিত মন্তব্য। যেখানে এই নির্মাতাকে সরাসরি গালি দিতে দেখা যায় এই শিল্পীকে।
আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে ফারুকীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরে সেই গ্রুপে জ্যোতি লেখেন, ‘কোন লেভেলের দেশদ্রোহী হলে এমন উসকানিমূলক কথা লেখা যায়। ওকে বা**র্ড ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। পুরো জঙ্গি স্টাইলে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার লাল গ্রুপের পুরো নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। যেমন মিডিয়াটা নোংরা করছে, এখন দেশের দিকে ওর নজর পড়ছে।’
এছাড়াও জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ওই গ্রুপের বিভিন্ন মেসেজে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেওয়া তারকাদের চিহ্নিত করে তাদের ‘সাইজ’ করার আহ্বান জানান এই অভিনেত্রী।