ফারুকী
যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়াতে জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিলাম, সেই আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর!
- বিনোদন ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ PM , আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ PM
সম্প্রতি উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের প্রথম থেকেই ছাত্রদের পক্ষে বলা দেশের অন্যতম নির্মাতা মোস্তফা সারয়ার ফারুকী। দু’দিন ধরে অফিস করেছেন উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়া নতুন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সোমবার (১১ নভেম্বর) ফারুকী নিজের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছেন। সংস্কৃতি অঙ্গনে পরিবর্তন আনতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কী কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেসব বিষয়ে সেদিন প্রাক আলোচনা করেন তিনি।
সংস্কৃতিতে দৃশ্যযোগ্য পরিবর্তন আনতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথাও এদিন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সংস্কৃতিতে আগামি দিনের পরিকল্পনা ঠিক করার কথাও বলেন ফারুকী।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে সমালোচিত হচ্ছেন ফারুকী। অনেকেই তাকে বিগত সরকারের দোসর বলেও মন্তব্য করছেন। প্রথম দিনে মন্ত্রণালয়ে অফিস করার দিনেও এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হন ফারুকী। এড়িয়ে না গিয়ে স্পষ্ট জবাবও দেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এ নিয়ে দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্ট করেন ফারুকী। সেখানে তাকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলা নিয়ে নিজের অভিমত জানান। লেখার শুরুতে তিনি বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, ঘুণাক্ষরেও যা আগে ভাবি নাই, এখন আমাকে সেটাই করতে হচ্ছে। যাই হোক শুরু করি। আমি মাত্রই দুই দিন হলো কাজ করছি। এর মধ্যে আমার ধারণা আমার মন্ত্রণালয়ে সহকর্মীদের মাঝে এই ধারণা দিতে পেরেছি যে আমরা কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটাতে চাই যেটা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সংস্কৃতি কর্মীদের কাজে আসবে। যাই হোক, যদিও আমি কোনও পদ চাই নাই, তবুও দায়িত্বটা নেয়ার পর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে করার চেষ্টা করছি।”
এরপরেই ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। ফারুকী লেখেন,“এরমধ্যে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অবিশ্বাস্য অভিযোগের- আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর! যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়ানোর জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালাম ১৬ জুলাই থেকে, অল আউট অ্যাটাকে গেলাম এটা জেনে যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা টিকে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল, আমি তারই সহযোগী?”
এরপর তিনি লেখেন,“আমি আমার চেয়ারের জন্য কোনো সাফাই দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু শিল্পী হিসাবে অপমানিত বোধ করেছি বলেই কয়টা কথা বলছি।”
এসময় ফারুকী শাহবাগের গণজাগরণের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয় আর সবার মত আমিও ভেবেছিলাম এটা নির্দলীয়। যে কারণে আমার সব পোস্টে এটাকে ঠেলে “রাষ্ট্র মেরামতে” এজেন্ডার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই যখন বুঝে যাই, তখনই লিখি “কিন্তু এবং যদির খোঁজে”। যে কিন্তু এবং যদি শাহবাগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজকের যে ফ্যাসিবাদের সূচনা করা হয়েছিলো তার প্রতিবাদে লিখি, “এই চেতনা লইয়া আমরা কি করিবো”। ২০১৪ সালে। এই দুইটা লেখার যে কোনো একটা লেখা ছাপা হওয়ার পর বিএনপির শিমুল বিশ্বাস সাহেব ফোন দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য! আমি কোনো দল করি না। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগ হলে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আমার লেখায় কী খুঁজে পেলেন যে আমার সাথে পরিচয় না থাকা স্বত্বেও আমার নম্বর জোগাড় করে ফোন দিলেন?”
“একজন লেখক যতোটা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন, ফ্যাসিবাদের কালে আমার সেই স্বাধীনতা পাওয়ার সুযোগ ছিলো না। তার মধ্যেও যতোটুকু করেছি তার ফলও আমাকে ভোগ করতে হয়েছে। ২০১৫ সালে সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন সেলের হেনস্তার শিকার হওয়ার মধ্যে যে দীর্ঘ অত্যাচারের শুরু। সেই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আমার সিমপ্যাথি পাওয়ার ইচ্ছা এবং প্রয়োজন নাই।” লিখেন ফারুকী।
সীমান্তে ফেলানী হত্যার প্রসঙ্গ তুলে এসময় ফারুকী লিখেন,“অনেকে বলছে, আমি ভারতীয় হেজেমনির অংশ। যে লোককে বাংলাদেশের কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট ঘৃণা করে আমি কোলকাতা কেন্দ্রিক ভাষার হেজেমনি ভেঙ্গে দিয়েছি বলে, সেই কিনা এই হেজেমনির অংশ! আমি পৃথিবীর কোনো দেশেরই ঢালাও নিন্দা করি না। কারণ দেশে নানা চিন্তার মানুষ থাকে। আমি সবার সাথেই কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার দেশের ক্ষতি হলে, আমি তার বিরুদ্ধে বলতে কুণ্ঠা করি না। ফেলানীর মৃত্যুর পর কি পোস্ট দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে সেটা দেখতে পারেন নীচে। আমার অবস্থানের উপহার হিসাবে ভারতীয় হাই কমিশনে একসময় কর্মরত রন্জন মণ্ডল নামের এক কর্মকর্তা তার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বহুবার কী অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলো সেটা খোঁজ করে দেখুন। আর সেই আমি পার্ট অব হেজেমনি?”
শেষে ফারুকী লিখেন,“আমি তো কোনো বিপ্লবী নই। ছিলাম না কোনো কালে। আমি ফিল্মমেকার। ঘটনাচক্রে এবং আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার সেই পরিচয়েই গর্বিত। আমি মারা গেলে আমাকে ফিল্মমেকার হিসাবেই মনে রাখা হবে, মন্ত্রী হিসাবে না। ফলে মন্ত্রীত্ব আমার কাছে কোনো অর্জন না, পাবলিক সারভেন্টের দায়িত্ব মাত্র। আমি এটা ফাইনালি অ্যাকসেপ্ট করেছি নিজের ফিল্মের বাইরেও আমার দেশকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে- এটা বিশ্বাস করেছি বলে। আমার মনে হয়েছে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজের লাভ-ক্ষতি না ভেবে এই ক্ষমতা দেশের কাজে লাগাই।”