শনিবার বিকেল কবে আসবে?
- বিনোদন মোমেন্টস
- প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৪:২৩ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৪:৪২ PM

নাটক সিনেমাকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সমাজ পরিবর্তনে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে সমাজকে সঠিক পথে চালনা করতেও এই বিনোদন মাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ড তদারকি করে দেখে কোন সিনেমা সমাজের সামনে প্রদর্শিত হওয়ার যোগ্য কিনা। কিন্তু নানা অজুহাতে সিনেমাকে আটকে দেয়ার নজিরও অনেক। আর আবারও সেন্সর বোর্ডের বলি হয়েছেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মস্তফা সারওয়ার ফারুকি। তাঁর নির্মিত 'শনিবার বিকেল' সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে আজ প্রায় ৩ বছর। স্যামুয়েল বেকেটের লেখা বিখ্যাত নাটক 'ওয়েটিং ফর গডো'র মত লিখতে হয়, ''ওয়েটিং ফর শনিবার বিকেল' ।
'শনিবার বিকেল' বা 'স্যাটারডে আফটারনুন' ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা অবলম্বনে নির্মিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা। যদিও নির্মাতার মতে সিনেমাটি কোনো বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয় বরং ঘটনা থেকে উৎসাহিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও কেন এতো বাধা। প্রথমবার সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি যখন যায় তখন বেশ প্রশংসা কুড়ালেও অদৃশ্য এক ইশারায় সিনেমাটিকে আবারও সেন্সরের দ্বারস্থ হতে হয়। এরপরই আটকে দেয়া হয় সিনেমাটি। ছাড়পত্র না পাওয়ার পর আসে নিষিদ্ধ হওয়ার খবর। এ বিষয়েও নির্মাতা পরিষ্কার করেছেন, 'শনিবার বিকেল' সিনেমায় কোনো সেন্সর বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি। তারপরও এটির ছাড়পত্র না পাওয়া হতাশাজনক।
সম্প্রতি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি স্ট্যাটাস ভক্তদের মনে আবারও দুঃখের সঞ্চার ঘটায়।ফারুকী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আজকে সকাল সকাল তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো! তিনি 'শনিবার বিকেল' নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বলেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয়বার শো করে তারা। এবং তারপর বলে দিল, ছবিটি ব্যান। নির্মাতা আপিল করলেন। আপিলের আজকে সাড়ে তিন বছর হলেও কোনো উত্তর পেলেন না ফারুকী। এমন পরিস্থিতিতে নির্মাতা নিজেদের অবস্থার সাথে তারাপদ রায়ের কবিতা মিলিয়ে বলেন, 'আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি।'
ফেসবুকে আরও একটি স্টেটাস শেয়ার করেছেন আজ (৯ আগস্ট) সকালে। ফিল্ম মেকিংয়ে আসাটাই তাঁর অপরাধ বলে দাবি করেছে। লিখেছেন, 'ধন্যবাদ, হে রাষ্ট্র! ফিল্মমেকিংয়ের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তো আর নাই। সুতরাং, ঠিকই আছে।'
আরও লিখেছেন, একটা ছবি ভাবা হয়ে গেলে তো সেটা দুনিয়াতে এগজিস্ট করে গেলো। বানানো হলে তো আরো শক্ত ভাবে এগজিস্ট করলো। আজ হোক কাল হোক সেটা তো দেখে ফেলবে মানুষ। তাই বলি কি এমন কিছু একটা করো যাতে ভাবনাটাও বন্ধ করে দেয়া যায়। এমন ওষুধ আবিষ্কার করো, হে রাষ্ট্র, যাতে কারো মনে ক্ষোভ জন্ম না নেয়! কারন সম্মিলিত ক্ষোভের চেয়ে বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র নাই! আরো খেয়াল রাখতে হবে ক্রমাগত চাপে এই ক্ষোভ যেনো ঘৃণায় রুপ না নেয়। কারন কে না জানে ঘৃণার চেয়ে বড় কোনো মারনাস্ত্র নাই।'
'শনিবার বিকেল' মুক্তি না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়াও। তারা তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেন, 'জাজ মাল্টিমিডিয়া এ পর্যন্ত ৪১টি সিনেমা তৈরি করেছে এবং মুক্তি দিয়েছে। আমাদের কোনো সিনেমা দেশ বা ধর্মবিরোধী কোনো বক্তব্য বা সংলাপ থাকে না। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটিতেও কোনো দেশবিরোধী বা ধর্মবিরোধী কিছু নেই। বরং এই সিনেমাটিতে আমাদের ধর্ম ও আমাদের দেশের সাংস্কৃতিকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।এখানে উল্লেখ করছে যে বিশ্বখ্যাত পত্রিকা “The Hollywood Reporter” ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দেখে লিখেছে: ‘এই সিনেমাটি বাংলাদেশে ব্যান করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকায়, কিন্তু ছবিটি দেখে আমাদের উপলব্ধি হলো, সিনেমাটি বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি করবে, কমাবে না।'
ভক্ত এবং সিনেমাপ্রেমীর' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার পক্ষে নিজেদের মতামত প্রদান করে মন্তব্য জানাচ্ছেন। বাংলা সিনেমার যে জয়জয়কার শুরু হয়েছে, এই মুহুর্তে 'শনিবার বিকেল' সহ অন্যান্য সিনেমাগুলো মুক্তি দেয়া হলে বাংলা সিনেমা আবারও পুর্বের ন্যায় রাজত্ব করবে এমনটাই প্রত্যাশা সিনেমাপ্রেমীদের।