এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি হবে ভয়বাহ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মশা
  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, কারণ ওই সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বেশি। তাই রাজধানীবাসীসহ দেশের মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রোববার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, কারণ ওই সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

সিটি করপোরেশনকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, প্রাক মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ না। এরই মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে যেটুকু হয়েছে, তা অন্যান্য সময়ে হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, নগরায়নের কারণে ঢাকা মহানগরে রোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের পরিসংখ্যান না দেখে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরে ৯ ধরনের গবেষণা করে থাকি। এসব গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখি এবং পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে নির্দিষ্ট করে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সেটি বলা এ মুহূর্তে কঠিন। রোগীদের তথ্য যাচাই করে তারপর বলা যাবে। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।

অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে নগরী গড়ে উঠছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি। অথচ এটি সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া।

ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণের পরীক্ষা সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ টাকা ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরীক্ষা ১০০ টাকা। কোনো হাসপাতালে এর বেশি নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা মহানগরীর পর কক্সবাজারে বেশি ডেঙ্গু রোগী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৪২৬। এ বছর সব মিলিয়ে ১৭৫০ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১৬০ জন ঢাকায় এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩ জন, যাদের দশজন ঢাকার।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলতি বছর ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এ ক্যাম্পে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কঠিন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানুষের ঘনত্ব বেশি এবং পানি সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে পানি পাত্রে জমিয়ে রাখা হয়, আর এ পানিতেই মশা জন্ম নেয়। তবে ভাষাগত সমস্যা ও ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশজনিত সমস্যার কারণে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেখানকার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের টিম গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক রাশেদা ইসলাম, অধ্যাপক কাজী তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


মন্তব্য