মশা মারতে ঢাকা উত্তর সিটি ব্যয় করবে ১২২ কোটি টাকা

ডেঙ্গু
  © সংগৃহীত

নতুন অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, যার মধ্যে ১২২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণে।

ঢাকায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩৫ হাজার ২৭০ জন মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ হাজার ১৮৭ জনই ঢাকার।

উত্তর সিটি জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণে সব মিলিয়ে ১২১ কোটি ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে মশা নিধনকাজ পরিচালনার জন্য ৮৪ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর মশার ওষুধ কেনায় ব্যয় হবে ৪৫ কোটি টাকা।

৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োজিত মশককর্মীদের দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায়।

এছাড়া আগাছা পরিষ্কারে ১ কোটি ৫০ লাখ, ফগার মেশিনসহ যন্ত্রপাতি পরিবহনে ৫ কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিশেষ কর্মসূচিতে ১ কোটি এবং মশক নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান পরিচালনায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

আর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য েবরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে এ খাতে ১১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল উত্তর সিটি, যার মধ্যে ব্যয় হয় ৭৪ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছর এ খাতে ব্যয় করা অর্থের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে ৬৩ শতাংশ।

গেল অর্থবছরে উত্তর সিটির মোট বাজেট ছিল ৫ হাজার ৪৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। অর্থ খরচ না হওয়ায় সংশোধনে তা ২ হাজার ৯৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এই হিসাবে গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ বাড়ছে ৭৮ শতাংশ।

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি সঠিক পথে আছে কি না-এমন প্রশ্নে বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিয়ে এবার বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ আছে। আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

“আমরা এতকিছু করছি, এর পরও মশা কেন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না- এই প্রশ্নের উত্তর আমরাও জানি না। আমরাও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি, আসলে সমস্যাটা কোথায়?”

আতিক বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মশার প্রজাতি, ব্যবহৃত ওষুধ—এসব নিয়ে গবেষণার জন্য সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর হয়েছে। আশা করছি গবেষণার মাধ্যমে আমরা আরও ভালো কিছু পাব।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘মশার কামড় ক্ষতিকর’ শীর্ষক একটি কার্টুন ছবির বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এই বইটি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি ডেড কাউন্টিতে শিশুদের মাঝে বিলি করা একটি বইয়ের বঙ্গানুবাদ। ১২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বিভিন্ন কার্টুনসহ সচেতনামূলক বাক্য দেওয়া হয়েছে।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ প্রাথমিক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা বিষয়ক এক লাখ সচেতনতামূলক বই বিতরণ করবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা আমাদের ছোটমনিদের জানাতে চাই যে মশার কামড় ক্ষতিকর। তাদেরকে জানাতে পারলে আমরা মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারবো। আমরা আমাদের শিশুদের সুপার হিরো বানাতে চাই, মশার বিরুদ্ধে।

“শিশুরা যদি মশার বিষয়ে জানতে পারে এবং কামড় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে, তবে অনেকাংশেই আমরা মশাবাহিত রোগ রুখতে পারবো। শিশুরা মশার প্রজননস্থল, ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানলে পরিবারে এর প্রভাব পড়বে।"

বাজেট ঘোষণায় মেয়র জানান, এবার রাজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থ বছরের বাজেটের চেয়ে ৭২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর উত্তর সিটি এ খাতে আয় করেছে এক হাজার ৬২ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ১০৩ টাকা।

এবারের বাজেটে অন্যান্য খাত থেকে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সরকারি অনুদান (উন্নয়ন সহায়তা) থেকে ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, সাহায্য মঞ্জুরি হিসেবে ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং সরকারি ও বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেটের মধ্যে ৮৫৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা রাজস্ব খাতে ব্যয়, অন্যান্য ব্যয় বাবদ ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ৫১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিজস্ব উৎস থেকে, ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা সরকারি উন্নয়ন সহায়তা থেকে এবং ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।

বাজেটে সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৪৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

মেয়র বলেন, “আমি আশা করছি এ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজারের সালামি, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর ও সড়ক খনন ফি বাবদ আয় বৃদ্ধি পাবে। অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সংগ্রহের ফলে ইতোমধ্যে রাজস্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং পাবলিক সার্ভিস নিশ্চিত করতে অনলাইনে সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

“রাজস্ব বাড়াতে আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। স্মার্ট পার্কিং ও রিকশায় কিউআর কোড সম্বলিত নম্বর প্লেট সরবরাহের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও কোরবানীর পশুর হাটের ইজারা বাবদ বিগত সময়ের চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ হবে। বলাবাহুল্য নতুন ওয়ার্ডগুলোতে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট করা হলে ভবিষ্যতে গৃহকর বাবদ রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।'

উত্তর সিটির সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকসহ কর্মকর্তারা বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।