পরিমিত খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও লেপটিন হরমোনের ভূমিকা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫৬ PM , আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৩ PM

খাবার না পেলে প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগে কেন? কিংবা খাবার খেলে আমাদের ক্ষুধা নিবারণ হয় কেন? অতিরিক্ত মোটা এবং অতিরিক্ত ওজনের মানুষ বেশি খায় কেন? ওজন কমানোর জন্য কি ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাদেরকে লেপটিন হরমোন এবং এর শারীরিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
লেপটিন হরমোন দেহের এডিপোজ টিস্যু তথা চর্বি কোষ থেকে নির্গত হয়। এই হরমোনটি আমাদের খাবার গ্রহণের পর পরিতৃপ্ততা অনুভূতি দেয় অর্থাৎ ক্ষুধাকে থামিয়ে দেয়। এটি মস্তিস্কে খাবার গ্রহণ না করার অনুভূতি তৈরি করে। ফলে আমাদের দেহে ক্ষুধা এবং খাবার গ্রহণের মাঝে একটি সাম্যবস্থা বিরাজ করে।
যার দেহে বেশি চর্বি আছে, তার লেপটিন হরমোনের পরিমাণ বেশি আছে। এজন্যে লেপটিন হরমোনটি মস্তিস্কে সারাক্ষণ অবস্থান করতে থাকে। ফলে মস্তিস্ক লেপটিন হরমোনের উপস্থিতি আর অনুধাবন করতে পারে না। লেপটিন রেজিস্টেন্স হয়ে পড়ি আমরা। তাই ক্ষুধা নিবারণ হয়না। ফলে খেতে কোন বাধা সৃষ্টি হয় না। আমরা খেতেই থাকি। যার কারণে মোটা হয়ে পড়ি। চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে। লেপটিন বেশি করে নির্গত হতে থাকে। আরো বেশি লেপটিন মস্তিস্কে লেপটিন রেজিস্টেন্স ত্বরান্বিত করে। ফলে আমরা অতিরিক্ত ওজন সর্বস্ব হয়ে পড়ি।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
অন্যদিকে, দীর্ঘক্ষণ খাবার গ্রহণ না করতে থাকলে লেপটিনের অভাব তৈরি হবে। ফলে ঘ্রেলিন জাতীয় হরমোন তৈরি হবে। যা আপনার ক্ষুধাকে ত্বরান্বিত করে। আমরা মস্তিস্কে খাদ্য গ্রহণের সংকেত পাই। পেটে মোচড় দেয়, মুখ শুকিয়ে যায়, লালা পড়ে। খাবার গ্রহণ শুরু হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে লেপটিন হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। ফলে খাবার গ্রহণের পরিতৃপ্ততা অনুভূত হতে শুরু করে। আমরা খাবার গ্রহণ বন্ধ করি। ক্ষুধা নিবারণ হয়।
মোটা ও বেশি ওজনের মানুষদের লেপটিন রেজিস্ট্যান্স কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? কিংবা যারা ক্যালরী রেসট্রিকশন করে তথা খাবার কম গ্রহণ করে ওজন কমাতে চায়, তাদের কিভাবে লেপটিন তৈরি করা যায়? নিচের পদ্ধতিগুলো মানলে উপরোক্ত দুটি উদ্দেশ্য তথা মোটা মানুষদের লেপটিন রেজিস্ট্যান্স কমানো যাবে এবং যারা ওজন কমাতে কম খাবার গ্রহণ করতে চান তথা লেপটিনের লেভেল বৃদ্ধি পাবে।
১। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ফলে লেপটিনের লেভেল বেড়ে যাবে। ক্ষুধা কম লাগবে। অন্যদিকে ঘুম কম হলে ক্ষুধার সিগন্যাল বেশি করে তৈরি হয়। ফলে বেশি খাবার গ্রহণ করা হয়। মোটা হয়ে যাবেন।
২। বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। যা লেপটিনের লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে আপনার মস্তিস্কে পরিতৃপ্ততার অনুভূতি ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
৩। স্ট্রেস কমাতেই হবে। যত বেশি স্ট্রেসে থাকবেন, তত কম লেপটিন তৈরি হবে। ফলে বেশি ক্ষুধা লাগবে। বর্তমান জামানায় স্ট্রেসের কারণেই বেশি করে খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। অন্যদিকে স্ট্রেস কমানোর ফলে লেপটিন বেশি তৈরি হবে।
৪। ব্যায়াম করতেই হবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেসও কমে আসে। হাঁটুন বা মেডিটেশন করুন। যার ফলে লেপটিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবেই সাথে ইনসুলিনেরও কাজ বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের লেপটিন রেজিস্ট্যান্স দ্রুত কমে আসে। মনে রাখবেন যারা পেট মোটা বা ওজন বেশি, তাদের অলসতা তৈরি হবে লেপটিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে। তাই, ব্যায়াম শুরু করা আর হয়ে উঠে না। খুব কঠিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা না করলে ব্যায়াম শুরু করতে পারে না অনেকেই। কারন মস্তিস্ক সাপোর্ট করে না। অন্যদিকে শুকনো পাতলা মানুষ সহজেই ব্যায়ামে আকৃষ্ট হয়।
৫। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বাদ দিতেই হবে। সহজ চিনি বাদ দিতেই হবে। সবসময় জটিল শর্করা খেতে হবে। ওটস, বিট, শাক সবজি, ফলমূল, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশিক্ষণ পেটে থাকে। তাই লেপটিন হরমোনের লেভেল বৃদ্ধি পায়। অলিভ ওয়েল, ডাল বা শস্যদানা, শিমের বীচি, আঙ্গুর, বিভিন্ন বাদাম গ্রহণ করলে লেপটিনের লেভেল বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুধা কমে আসবে।
৬। মাঝে মাঝে ১২-১৪ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। ফলে দেহে লেপটিনের অভাব তৈরি হবে। যার কারণে মস্তিস্কে লেপটিন রেজিস্ট্যান্স দূর হবে। মনে রাখতে হবে লেপটিনের অভাবে মস্তিস্কে খাবার গ্রহণের সিগন্যাল তৈরি হবে। ফলে খাবার চাইবে শরীর। তাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রমজান মাসে যা সফল ভাবে সম্পাদন করা যায়। তাই প্রতি সপ্তাহেই অন্তত দুই দিন রোজা রাখুন।
অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মুহিত
ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী ও ফার্মাকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়