মাত্র ৪ দিনে বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা দেবে ভারত, যেভাবে কাজ করতে হবে

ভারত
  © ফাইল ছবি

চিকিৎসাসেবা আরও সহজ করার জন্য বাংলাদেশিদের চার দিনে মেডিকেল ভিসা প্রদান করছে ভারতের  পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের মেডিকেল ভিসা ব্যবস্থাপনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন এই ব্যবস্থায় এখন থেকে আবেদনের দুই থেকে চার কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল ভিসা পাবেন রোগীরা। এ জন্য রাজ্যের হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ ওয়েবসাইটে যাচাইকৃত কাগজপত্র আপলোডের দায়িত্ব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যাচাই করা কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে মেডিকেল ভিসা প্রদান করবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন বা সহকারী হাইকমিশনারের দপ্তর।

যেভাবে কাজ করা হবে: সম্প্রতি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের দু’জন কর্মকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংগঠনে এ এইচ ই আইয়ের মধ্যকার একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন থেকে রোগীদের ভিসার আবেদনের ভিত্তিতে প্রথমে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করবে, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এরপর হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ওয়েবসাইটে রোগীর ‘ভিসা ইনভাইটেশন লেটার’ (ভিআইএল) প্রকাশ করা হবে।

নতুন এই ব্যবস্থায় যে ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করা হবে, সেটি তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ।

রূপক বড়ুয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে আমাদের পক্ষ থেকে একজনের দায়িত্ব থাকবে ‘ভিসা ইনভাইটেশন লেটার’ আপলোড করা এবং তাদের পরিচয় আগে থেকেই নথিভুক্ত করা। লগইনের সময় ওই ব্যক্তির আধার কার্ড ও হাসপাতালের জিএসটি নম্বরও দিতে হবে। এরই ভিত্তিতে হাইকমিশনের দিক থেকে অল্প সময়ের মধ্যে মেডিকেল ভিসা দেয়া হবে।

তিনি জানান, এতদিন মেডিকেল ভিসা পাওয়ার জন্য ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মতো অপেক্ষা করতে হতো। তবে এখন মাত্র দুই থেকে চার কর্মদিবসের মধ্যেই সেটি হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে হাসপাতালের পক্ষ থেকে একাধিক পর্যায়ে যাচাই করা তথ্য আপলোডের পর একটি ২৫ সংখ্যার ‘ইউনিক আইডি’ ক্রিয়েট হবে। এই আইডি যেমন আবেদনকারীর কাছে যাবে, তেমনই হাসপাতাল এবং ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা বিভাগেও যাবে।

সীমান্তে চিকিৎসার নথি দিতে হবে: কলকাতার হাসপাতালগুলোয় মাঝে মাঝে অভিযোগ আসে, তাদের পাঠানো না হওয়ার পরও ভিসা ইনভাইটেশন লেটারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে প্রকৃত মেডিকেল ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, অনেকে এমনও মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে আসেন, যারা চিকিৎসা নয়, অন্য কোনো কাজে আসছেন।

আরও বলা হচ্ছে, কেউ হয়তো চিকিৎসার জন্য এসেছেন, কিন্তু তার অর্থ শেষ। তারা বাংলাদেশে কোনো আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেন টাকা নিয়ে আসার জন্য। আর তাকে তাড়াতাড়ি আসতে হবে বলে তিনিও মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করে চলে আসেন।

রূপক বড়ুয়ার ভাষ্য, আবার এমনটাও হয় যে এক হাসপাতালের ইনভাইটেশন লেটারের ভিত্তিতে মেডিকেল ভিসা নিয়ে আসা বাংলাদেশিদের সীমান্ত থেকে এক শ্রেণির দালালরা ধরে নিয়ে ছোটখাটো কোনো নার্সিং হোমে চিকিৎসা করায়। কেউ কেউ আবার মেডিকেল ভিসা নিয়ে অন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশে ফিরে যান।

তিনি বলেন, নতুন এই ব্যবস্থাপনায় এখন থেকে এসব বন্ধ হবে। মেডিকেল ভিসা নিয়ে কেউ যখন সীমান্ত অতিক্রম করবে, তখন তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবার যখন ফিরবেন, তখন তিনি যে সত্যিই নির্দিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন, সেই কাগজপত্রও জমা দিতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনে যেমন অল্প সময়ে ভিসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তেমনই সেটির অপপ্রয়োগ যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।