তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী, ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে

তাপমাত্রা
  © ফাইল ছবি

বৈশাখের শুরুতেই কাঠফাটা রোদে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। গরমে সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা, পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি একদম ঠিক হবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকে তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। তবে রোদে যারা কাজ করে, কারও একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা উচিত হবে না। এতে মাথাব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে-কেউ মারাও যেতে পারে। গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা পানিশূন্যতা। তাই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি পানের কারণেই ঢাকাসহ দেশের হাসপাতালগুলোয় জ্বর, সর্দি, হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, টাইফয়েড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গরম বাড়লে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নেয়। তবে বর্তমানে সে সংখ্যা প্রায় ৫০০ বলে জানান চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশু। শিশু হাসপাতালে গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারেও বেড়েছে রোগীর চাপ।

আইসিডিডিআরবির হাসপাতালপ্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘আইসিডিডিআরবিতে দিনে ৭০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনো সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে রোগী বাড়ছে। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ বছর সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগী বেশি। ডায়রিয়ার চেয়ে এখন পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ৯৯ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। চলতি মাসের ১৮ দিনে ভর্তি হয়েছে ২৪৬ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ জন। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসে হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসা নিয়েছে। তীব্র গরমে শিশুদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে অভিভাবকদের।’ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। সুতি ও হালকা রঙের বিশেষ করে সাদা কাপড় পরতে হবে, একটানা বাইরে কাজ করা যাবে না। রিকশাচালক, হকার বা যারা বাইরে কাজ করেন তারা অবশ্যই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেবেন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর পানি খেতে হবে।’


মন্তব্য