ভয়াবহ ভূমিকম্প

অভিযান শেষ করছে তুরস্ক, জীবিত উদ্ধারের আশা ফুরিয়ে আসছে

তুরস্ক
  © সংগৃহীত

আধুনিক যুগের ইতিহাসের মারাত্মক প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোববার ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত তুরস্ক উদ্ধার প্রচেষ্টার অবসান ঘোষণা করছে। যদিও এখনও হাজার হাজার পরিবার কেবল শোক পালনের জন্য নিখোঁজ স্বজনের মৃতদেহ পাওয়ার আশায় প্রার্থনা করছে।

রোববার তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) বলছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় চলতি মাসের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের প্রায় দুই সপ্তাহ পর তুরস্কের বেশিরভাগ প্রদেশে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারির ৭ দশমিক ৮ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্কের যে কয়েকটি শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কাহরামানমারাস সেসব শহরের একটি।

এই শহরের একটি ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে বুলডোজার চালাচ্ছেন আকিন বোজকার্ট। তুর্কি এই বুুলডোজার অপারেটর বলেন, ‘আপনি কি একটি মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবেন? আমরা করছি... ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে লাশ পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা প্রার্থনা করছি।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ৪৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে এই প্রাণহানির সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে কেবল তুরস্কেই ৩ লাখ ৪৫ হাজারের মতো অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়েছে। এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

তবে ভূমিকম্পের পর থেকে ঠিক কতসংখ্যক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন সেবিষয়ে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি তুরস্ক এবং সিরিয়া।

রোববার তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডির ভূমিকম্প ও ঝুঁকি হ্রাস বিভাগের মহাপরিচালক ওরহান তাতার বলেছেন, পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টটি পাঁচটি ভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে গেছে। কেবল মালাটিয়া প্রদেশেই ২৫ কিলোমিটার ফাঁটল পরিমাপ করা হয়েছে।

ভূপৃষ্ঠের ওপর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ফাটল দেখা দিয়েছে। এর ফলে ভূত্বকে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে বড় যে ফাটলটি ধরা পড়েছে সেটি ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত; এর গভীরতা আট থেকে ৯ কিলোমিটার।

ভূমিকম্পের ১২ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে বের করার শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে শনিবার রাতে আন্তাকিয়ার এক ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকারীদের হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। উদ্ধারকারীরা বলেছেন, প্রশিক্ষিত কুকুর ও থার্মাল ক্যামেরায় দুই ব্যক্তির জীবিত থাকার আলামত শনাক্ত হয়েছে শনিবার। কিন্তু উদ্ধার তৎপরতা শুরুর প্রায় ৮ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে উদ্ধারকারীরা অভিযান স্থগিত করেন।

পরে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডির সদস্য মুজদাত এরদোয়ান বলেন, কেউ বেঁচে নেই। এসময় তার মুখ ও ইউনিফর্ম ধুলায় ঢাকা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, আমরা আরও মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারব।’