পাকিস্তানী মুসলিম মেয়ে ও ভারতীয় হিন্দু ছেলের অনলাইন প্রেম ও পরিণতি

ভারত-পাকিস্তান
পাকিস্তানী ইকরা জিওয়ানি (বাঁমে) ও ভারতীয় মুলায়াম সিং যাদব (ডানে)  © বিবিসি বাংলা

জানুয়ারিতে, এক পাকিস্তানি নারীকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করানোর জন্য এবং তাকে জাল আইডি কার্ড পেতে সহায়তা করায় এক ভারতীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভারতের ২১ বছর বয়সী মুলায়াম সিং যাদব এবং পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী ইকরা জিওয়ানির প্রথম পরিচয় হয় তিন বছর আগে। বোর্ড গেম লুডো খেলার সময়ে অনলাইনে দেখা হয় এবং সেখান থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা৷ কিন্তু তারা জানতেন যে তাদের একসাথে থাকা অনেক কঠিন হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভঙ্গুর। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্র হয়। এই দুই প্রতিবেশী যুদ্ধেও জড়িয়েছে একাধিকবার।

এমন পরিস্থিতিতে এই দুই দেশের মানুষ একে অপরের দেশে ভ্রমণ করতে গেলে তাদের ভিসা পাওয়া জটিল হয়ে পড়ে। গত সেপ্টেম্বরে মুলায়াম ও ইকরা নেপালে ভ্রমণে যান। সেখানে তারা বিয়ে করেন। এরপর তারা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরে ভ্রমণ করেন এবং একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু জানুয়ারিতে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন হঠাৎ কালো ছায়া নেমে আসে। ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং জালিয়াতির অভিযোগ গ্রেপ্তার করা হয় যাদবকে।

জালিয়াতি এবং যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই একজন বিদেশি নাগরিককে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে যাদবের বিরুদ্ধে। ইকরা জিওয়ানিকে গত সপ্তাহে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর যাদব বর্তমানে বেঙ্গালুরুর কারাগারে আছেন। যাদবের পরিবারের সদস্যরা, যারা উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস করেন, তারা এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, এই দম্পতির গল্পটি কেবল একটি প্রেমের ঘটনা। গ্রেফতার হওয়া যাদবের ভাই জিৎলাল বলেন, আমরা তাদের বাড়ি ফিরে পেতে চাই। তিনি বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি বুঝতে পারি। কিন্তু তারা শুধুই প্রেম করেছে।  

এমনকি পুলিশও তাদের এমন কথায় সম্মতি জানিয়েছে বলে মনে হয়। বেঙ্গালুরুর এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অবৈধ প্রবেশ ও জালিয়াতি ছাড়াও, এটি একটি প্রেমের গল্প বলে মনে হচ্ছে। এই প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, কোভিড লকডাউনের সময়। যাদব বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করতেন এবং জিওয়ানি পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহরের ছাত্রী ছিলেন।

অনলাইনে দেখা হওয়ার পর দুজনই এতো দীর্ঘ দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ইকরা জিওয়ানিকে বিয়ে জন্য তার পরিবারের চাপ দিতে থাকলে তিনি যাদবের পরামর্শে, পাকিস্তান ছেড়ে আসেন এবং যাদবের সাথে দেখা করতে দুবাই হয়ে নেপালে যান। পুলিশ বলছে, সেখানকার একটি মন্দিরে হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন তারা, এরপর ভারতে ফিরে আসেন।

কিন্তু জিওয়ানির কাছে ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না, তাই পুলিশ বলেছে যে মি. যাদব তার জন্য একটি জাল আধার কার্ডের ব্যবস্থা করে - যা ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র। পুলিশের মতে, যাদব প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতেন যখন জিওয়ানি বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই পাকিস্তানে নিজ বাড়িতে তার মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন, যার ফলে পুলিশ তার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা গত মাসে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন কারণ ফেব্রুয়ারিতে ওই শহরে দুটি বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল: অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো এবং একটি জি-টুয়েন্টি অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক। আরও তদন্তের পর, ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং ২০  জানুয়ারি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে হস্তান্তর করা হয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এস গিরিশ বিবিসিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত, তার বিরুদ্ধে শুধু অবৈধভাবে দেশে আসা ছাড়া আর কোনও অপরাধের অভিযোগ নেই। তবে তদন্ত চলছে। বিবিসি এ বিষয়ে জানতে ইকরা জিওয়ানি বা পাকিস্তানে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।

সপ্তাহের শুরুতে, পিটিআই নিউজ এজেন্সি জানায়, মেয়েটির বাবা বাড়ি পৌঁছার কথা নিশ্চিত করেছেন। তারা এই বিষয়ে আর কথা বলতে চান না। যাদবের মা শান্তি দেবী বলেছেন, তিনি আশা করেন দুই দেশের সরকার তাদের পুনরায় এক করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, সে মুসলিম না পাকিস্তানি তা আমরা চিন্তা করি না, সে আমাদের পুত্রবধূ। আমরা তার ভালো যত্ন নেব।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ