পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কি একই ছকে হচ্ছে?

রাম নবমী
রাম নবমী উৎসবকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সংঘর্ষ  © বিবিসি

শের শাহের আমলে তৈরি ভারতের পূর্ব – পশ্চিমকে যুক্ত করেছে যে মহাসড়ক, সেই গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জিটি রোডের ধারে একটা ভাঙ্গাচোরা চায়ের দোকানে চুপচাপ বসেছিলেন মুহম্মদ সাউদ। তার দোকানের একেবারে পাশেই একটা হিন্দু মন্দির।

“আমি মুসলমান, কিন্তু পাশেই হিন্দুদের মন্দির। আবার তার ওপাশে আমার ভাইয়ের দোকান। এই মন্দিরটা আমরাই সাফসুতরো করি, লাইট জ্বালিয়ে দিই। এতবছর এখানে দোকান করছি, কিছু হয় নি, কিন্তু দেখুন, আমরা দোকানটা পুরো ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল,” বিবিসিকে বলছিলেন মি. সাউদ।

বিহারের সমস্তিপুর থেকে প্রায় চার দশক আগে মি. সাউদ চলে এসেছিলেন হুগলী জেলার চটকল এলাকা রিষড়ায়।

এই রিষড়াতেই রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়ে গেছে কদিন আগে। ওই মিছিল রামনবমীর হলেও উৎসবে দুদিন পরে পুলিশ সেখানকার হিন্দুদের মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিল, কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, সব এলাকায় একদিনে রামনবমীর মিছিল করলে পর্যাপ্ত পুলিশ সব জায়গায় পাঠানো যাবে না, তাই দিন ভাগ করে মিছিল হবে।

'দোকানগুলো ভাঙ্গল, জিনিষপত্র তছনছ করে দিল'। মি. সাউদের দোকানের ঠিক উল্টোদিকে আরেকটি দোকানও ভাঙ্গা।

তিনি বলছিলেন, “মিছিল যেদিকে হচ্ছিল, সেখানে গণ্ডগোল হচ্ছে শুনেছিলাম। হঠাৎই সন্ধ্যাবেলা এদিকে একদল ছেলে এসে পাশে রাখা কয়েকটা ঠেলাগাড়ি বড়রাস্তার মোড়ে জড়ো করে আগুন লাগিয়ে দিল। ওই ঠেলাগুলো সবই ছিল মুসলমানদের। তারপরে আমাদের দোকানগুলো ভাঙ্গল, জিনিষপত্র সব তছনছ করে দিল।“

জিটি রোডের ওপরে যখন দোকান ভাঙ্গচুর, ঠেলাগাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, একটু দূরে হিন্দু প্রধান এলাকার দিকে উড়ে আসছে ইঁট, কাঁচের বোতল।

ঘটনার কদিন পরেও সেইসব ইঁটের টুকরো আর কাঁচের বোতল রাস্তার ধারে জড়ো করা ছিল। ওই এলাকার অলিতে গলিতে হিন্দুত্বের প্রতীক গেরুয়া পতাকার ছড়াছড়ি, গলির মোড়ে মোড়ে জটলা। পুলিশ মাঝে মাঝেই এসে সবাইকে বাড়িতে চলে যেতে বলছে।

রিষড়া মূলত একটা শিল্পাঞ্চল। একেবারে পাশেই চটকল রয়েছে। সাধারণত শ্রমিক মহল্লায় ধর্মীয় হানাহানি দেখা যেত না। আগেও কখনও রিষড়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয় নি।

রিষড়া, হাওড়ায় সংঘর্ষ শুরু একইভাবে
অভিষেক সিং নামে এক যুবক বলছিলেন, “গত ১২ বছর ধরে যেভাবে রামনবমীর মিছিল বেরয়, এবারও একই রকম মিছিল বেরিয়েছিল, তবে অন্য বছরের সঙ্গে ফারাকটা ছিল, এবার অনেক বেশি ভিড় হয়েছিল, অনেক মানুষ এসেছিলেন।

“মিছিলটা জিটি রোড পেরনোর সময়েই অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা (মুসলমানরা) ইঁট পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল গণ্ডগোল,” বলছিলেন মি. সিং। রিষড়ার ঘটনা ঘটার দুদিন আগে ঠিক একইভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বেঁধেছিল হাওড়ার শিবপুরে।

হুগলীর রিষড়ায় আগে কখন সাম্প্রদায়িক অশান্তি না হলে হাওড়ার যে জায়গায় রামনবমীর দিন, ৩০ মার্চ সংঘর্ষ বাঁধে, সেখানে ২০২২ সালের রামনবমীর সন্ধ্যাতেও একইরকম সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল।

এলাকাটি ঘুরে দেখার সময়ে নজরে পড়ল একটি হিন্দু মন্দির, আর তার ঠিক সামনেই সার দিয়ে ফল বিক্রি করছেন মুসলমান দোকানীরা। সেখান থেকে রোজা রাখা মুসলমানরা যেমন আম, কলা, তরমুজ কিনছেন, তেমনই ফল কিনছেন হিন্দুরাও।

পাশের একটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দা রাজেশ ঝাওয়ার বলছিলেন, “ওদের সঙ্গে তো আমাদের কোনওদিন খারাপ সম্পর্ক ছিল না, ওদের দোকান থেকে তো আমরা সবজি, ফল নিয়মিতই কিনি। সেদিন যে কেন পাথর মারতে শুরু করল, কেন জানে!” ওই এলাকাটির নাম শিবপুর কাজীপাড়া।

'মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র হয়ে গেল রাস্তাটা'
স্থানীয় কয়েকজন বলছিলেন, একটি মসজিদের সামনে দিয়ে রামনবমীর মিছিল যাওয়ার সময়ে তার ওপরে ইঁট-পাথর ছোঁড়া হয়। তখন ইফতারের আয়োজন চলছিল।

সরকার দাবী করছে ওই এলাকা দিয়ে মিছিলের অনুমতি ছিল না, কারণ সেখানে গতবছরও সহিংসতা হয়েছিল। তবুও মিছিলটি সেখানে যায় এবং মিছিলকারীদের অস্ত্র ও পিস্তলও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

“ইঁট-পাথর যে কে মারল প্রথমে, সেটা জানি না, কিন্তু দুই ধর্মের মানুষের মধ্যেই তারপরে ইঁট বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়,” বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মেহতাব আজিজ।

মি. ঝাওয়ার যে বহুতল ভবনে থাকেন, সেখানকার এক বাসিন্দা, নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বললেন, “আমি জানলার ধারে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিলাম, মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র হয়ে গেল রাস্তাটা।“

নিজের ফ্ল্যাট থেকে রেকর্ড করা ভিডিও-ও তিনি আমাকে দেখাচ্ছিলেন, যাতে দেখা যাচ্ছে যারা ইঁট ছুঁড়ছে, তাদের কারও মাথায় টুপি আছে, আবার কারও হাতে রয়েছে গেরুয়া ঝাণ্ডা। ইঁট বৃষ্টির পরেই শুরু হয় আগুন লাগানো আর ভাঙ্গচুর। কারও ফলের ঠেলাগাড়ি, কারও বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা ট্যাক্সি – হিংসার আগুনে জ্বলে গেছে সবই।

'ঘটনার প্রতিক্রিয়া তো হবেই'
যে মসজিদের সামনে থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, পিএম বস্তির সেই মসজিদের গলিতেই দেখা হয়েছিল শাহিদ ওয়ারসির সঙ্গে। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে একটা ট্যাক্সি কিনেছিলেন।

বলছিলেন, “আমার গাড়িটা একেবারে কোনের দিকে রাখা ছিল। গাড়িতে আমার নাম আর মাশাল্লা লেখা ছিল। সেটা দেখেই ওরা পুরো জ্বালিয়ে দিয়েছে গাড়িটা। কিছুই অবশিষ্ট নেই গাড়ির। ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম কথা বলতে, তারা কিছু করতে পারবে না, গাড়িটা জ্বালিয়ে দিল, তবুও ঋণের কিস্তির টাকা আমাকে মেটাতেই হবে। “মুসলমান মহল্লার যুবকরা বলছিলেন, “কোনও ঘটনার প্রতিক্রিয়া তো হবেই।“

পরের দিন শুক্রবারের নামাজের পরে দলে দলে এসে ওই অঞ্চলের বেশ কিছু আবাসিক ভবনে ইঁট পাথর মেরেছেন মুসলমানরা।

এক বাসিন্দা মেঘনা ঝাওয়ার বলছিলেন, “মুসলমানরা নামাজ আদায় করার পরে একসঙ্গে এসে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। একটা আবাসিক ভবনে, মন্দিরে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। একটা বড় বিপণির পুরো কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছে। আগুনও লাগানো হয়েছিল। পুলিশ ছিল, তবে তারা কিছু করে নি।

“গতবছরও একই ঘটনা হয়েছিল। এটা কাকতালীয় ঘটনা নয়। একদম নিশানা করেই করা হয়েছে,” বলছিলেন মিজ ঝাওয়ার। এলাকার একটি হিন্দু মন্দিরের ওপরে যে শুক্রবার দুপুরে পাথর ছোঁড়া হয়েছে, সেই নিদর্শন এখনও রয়েছে সেখানে।

মন্দিরটির পুরোহিত সুদামা ঠাকুর বলছিলেন, দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ হঠাৎই ইঁট পড়তে শুরু করল। আমি তখন মন্দিরের ভেতরেই ছিলাম। বিগ্রহের দিকে বা মন্দিরের ভেতরে ইঁট ছোড়ে নি কেউ, কিন্তু বাইরের দিকে, ছাদে বৃষ্টির মতো ইঁট পড়েছে। সব এক জায়গায় জড়ো করে রেখে দিয়েছি আমি।"

রাজনৈতিক দোষারোপ
হাওড়ারই বাসিন্দা, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলছিলেন, “আমরা তো রামনবমীর মিছিল ছোটবেলা থেকেই দেখছি। আমাদের শহরের রামরাজাতলা তো রামের পুজোর জন্যই বিখ্যাত। কিন্তু কোনওদিন দেখি নি লাঠি, তলোয়ার এমনকি পিস্তল নিয়ে রামনবমীর মিছিল হচ্ছে। এই কিছুদিন হল আমরা এটা দেখছি। হিন্দু মুসলমানে ভাগ করে দিলে যাদের লাভ হবে, তারাই এটা করতে চাইছিল।“

তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্টতই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর দিকে নিশানা করছে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য। আবার বিজেপি দোষ দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে।

দলটির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাইয়ের কথায়, “হান্ড্রেড পার্সেন্ট মুসলিম ভোট টিএমসির দিকে পোলারাইজ হয়েছিল, সেটা ঘুরে যাচ্ছে। এটা আবার পোলারাইজ করার জন্য রামনবমীতে উনি প্ল্যান করে এটা করিয়েছেন। আর রাজনীতি হলে লাভ তো কারও না কারও হবে, কিন্তু মমতা ব্যানার্জী যেটা করছেন, সেটা পশ্চিমবঙ্গকে আগুনের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।“

রামনবমীর মিছিলে উস্কানিমূলক গান?
এবছর রামনবমীর সন্ধ্যায় যতগুলি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, সেগুলোর পুলিশী তদন্ত চলছে, কিন্তু ঘটনাক্রম দেখে মনে হচ্ছে একই কায়দায় সহিংসতা ছড়িয়েছে। মগরিবের নামাজ চলাকালীন, অথবা ইফতারের সময়ে মসজিদ বা মুসলমান এলাকার সামনে দিয়ে রামনবমীর মিছিল গেছে আর ঠিক সেখানেই সংঘর্ষ বেঁধেছে।

মেহতাব আজিজের কথায়, “আগেও তো রামনবমীর মিছিল দেখেছি। তারা তাদের ভগবানের গান বাজিয়ে মিছিল নিয়ে চলে যেত। তবে এবার যেসব গান বাজানো হচ্ছিল, সেগুলি খুবই উস্কানিমূলক। যেমন একটা গান চলছিল হিন্দুস্তানে থাকতে গেলে কী কী করতে হবে – এইসব গান।“

রামনবমীর মিছিলে উস্কানিমূলক গানের প্রসঙ্গ আসতেই মনে পড়ল ২০১৮ সালের কথা। সেবার রামনবমীর মিছিল থেকে বড়সড় দাঙ্গা ছড়ায় কয়লা আর শিল্পাঞ্চল আসানসোল-রাণীগঞ্জে।

সেই দাঙ্গার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল, তা খুঁজতে গিয়ে জেনেছিলাম রামনবমীর মিছিল থেকে যেসব গান বাজানো হয়েছিল সেখানে, তা মুসলমান সমাজকে উত্তেজিত করার জন্য যথেষ্ট।

কী থাকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ওইসব গানে?
রামনবমীর মিছিলের জন্যই ডি জে বা ডিস্ক জকিদের দিয়ে নানারকম সাউন্ড ট্র্যাক মিশিয়ে তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা ওইসব গানগুলি। বেশীরভাগ গানই শুরু হয়েছে পাকিস্তানের প্রতি বিষোদগার দিয়ে।

জয় শ্রীরাম ধ্বনি আর পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগান বা ছোট্ট ভাষণ দিয়ে শুরু হলেও গানগুলির বাকি অংশে অবশ্য যেসব কথা রয়েছে, সেখানে আর পাকিস্তান নেই।

কোথাও বলা হয়েছে - 'যেদিন হিন্দুরা জেগে উঠবে, সেদিন টুপীওয়ালারাও মাথা নত করে বলবে জয় শ্রীরাম', কোনও গানে লেখা হয়েছে, 'যেদিন আমার রক্ত গরম হবে, সেদিন তোমাকে দেখিয়ে দেব - সেদিন আমি নয়, কথা বলবে আমার তলোয়ার'।

সাউন্ডট্র্যাকের সঙ্গে মেশানো হয়েছে ছোট ছোট ভাষণও - যা পুরোটা ভাল করে শুনলে বোঝা যাবে যে সেগুলো পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বলা, কিন্তু একটা অংশ বিচ্ছিন্নভাবে শুনলে মনে হতেই পারে যে কথাগুলো মুসলমান সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। গানগুলোতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান, 'ভারতমাতা কি জয়', 'বন্দে মাতরম' সব কিছুই।


নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হচ্ছে
রামনবমীর মিছিল থেকে যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রতিবছরই হচ্ছে, তার শুরুটা হয়েছিল সেই ২০১৮ সালে আসানসোল রাণীগঞ্জের দাঙ্গা দিয়েই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন।

“২০১৮ তে যখন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল, বা তার পরের বছর ২০১৯ এ লোকসভার ভোট ছিল, তখনও ঠিক এভাবেই রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে এরকম ঘটনা হয়েছে। আবার ২০২৩-এ এসেও আমরা দেখছি রামনবমীকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। কয়েকমাস পরে আবারও পঞ্চায়েত নির্বাচন, আবার পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। একই প্যাটার্নে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষগুলো হচ্ছে। কাকতালীয় ব্যাপার মোটেই নয় এগুলো,” বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।

তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাঁধলে ধর্মীয় মেরুকরণ হয়, আর তার প্রভাব পড়ে কাছাকাছি সময়ে থাকা নির্বাচনের ফলাফলে।

রামনবমীকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা আর তা থেকে ধর্মীয় মেরুকরণের ফল ২০১৮র পঞ্চায়েত ভোট আর ২০১৯এর লোকসভা ভোটে পেয়েছিল বিজেপি।

“এই নতুন ধরণের মেরুকরণের প্রচেষ্টায় একদিকে যেমন বিজেপির স্বার্থ আছে, তেমনই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসেরও স্বার্থ আছে,” বলছিলেন অধ্যাপক বসুরায়চৌধুরী।

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার মুসলমানপ্রধান বিধানসভা কেন্দ্র সাগরদিঘীতে উপনির্বাচন হয়েছিল। কেন্দ্রটি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। তবে এবারে সেই আসনে জিতেছে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী। এর আগে যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জিতেছিল, সেই আসনে এবারের জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ২৫ হাজার ভোটে জিতেছেন, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের দিক থেকে প্রায় ৭৫ হাজার ভোট ‘সুইং’ করে বা ঘুরে গিয়ে বিরোধীদের পক্ষে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভোট দেন। কিন্তু সাগরদিঘীর ফলাফলের পরে তৃণমূল কংগ্রেস চিন্তায় পড়েছে যে মুসলমান ভোট কি তাহলে তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে!

“সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা, যার মধ্যে সাগরদিঘীর ফলাফলও আছে, তা থেকে ইঙ্গিত পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সম্ভবত আশঙ্কা করছে যে সংখ্যালঘু ভোট, যার বেশিরভাগটাই তারাই পেত, সেই ভোট বিভাজন হয়ে যেতে পারে। তাই এধরণের পরিস্থিতি উভয় পক্ষের কাছেই অত্যন্ত জরুরী যে ধর্মের ভিত্তিতে একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো,” বলছিলেন সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।

তিনি তাই মনে করেন হাওড়ার শিবপুর, রিষড়া বা উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে, তা বিচ্ছিন্ন নয়। সূত্র: বিবিসি


মন্তব্য