এবার দিল্লিতে আইনজীবীর পোশাকে নারীকে গুলি, প্রকাশ্যে হত্যা বাড়ছে ভারতে?

ভারত
আইনজীবীর পোশাকে গুলি করে দুষ্কৃতকারী  © নিউজএইট্টিন

এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রায়াগরাজে (পুরাতন নাম এলাহবাদ) সাংবাদিক সেজে সাবেক সংসদ সদস্য আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে লাইভে গুলি করে হত্যা করে। এবার দেশটির দক্ষিণ দিল্লির সাকেত আদালতে আইনজীবীর পোশাক পরে এক নারীকে গুলি করলো দুষ্কৃতী। ওই নারী ও তার আইনজীবীর গায়ে গুলি লেগেছে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তর সঙ্গে আর্থিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিল ওই নারীর। খবর ডয়চে ভেলে ও এনডিটিভির।

সংবাদসংস্থা এএনআই জানায়, মোট চার রাউন্ড গুলি চালায় ওই দুষ্কৃতী।

গত শনিবার সাংবাদিকের ছদ্মবেশে অপরাধীরা উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে অভিযুক্ত সাবেক এমপি রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পেশাজীবীদের ছদ্মবেশে যেভাবে দুষ্কৃতীরা গুলি করে মানুষকে হত্যা করছে, তাতে রীতিমতো চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। দিন দুয়েক আগে দক্ষিণপশ্চিম দিল্লির দ্বারকাতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী গুলি করে এক আইনজীবীকে হত্যা করেছে।

কী হয়েছিল? দক্ষিণ দিল্লির সাকেত আদালত খুবই সুরক্ষিত জায়গা। সেখানে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারেন। সেই আদালত চত্বরে শুক্রবার সকালে আইনজীবীর পোশাক পরে এক দুষ্কৃতী এক নারীকে লক্ষ্য করে চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায়। তিনটি গুলি ওই নারীর দেহে লাগে। দুইটি পেটে ও একটি হাতে। পুলিশের ডিজি চন্দন চৌধুরী হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, ওই নারীর নাম এম রাধা। তাকে সঙ্গে সঙ্গে সাকেতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে তাকে এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটজনক। রাধার সঙ্গে থাকা আইনজীবীর গায়েও গুলি লাগে। তবে তার আঘাত অতটা গুরুতর নয়। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অভিয়ুক্তের সঙ্গে ওই নারীর কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তারপর দুষ্কৃতী পিস্তল বের করে গুলি চালায়।

চন্দন চৌধুরী বলেছেন, অভিযুক্ত আগে আইনজীবী ছিল। পরে বার কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। ফলে সে আর ওকালতি করতে পারে না। ওই অভিযুক্তই রাধা ও আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা জালিয়াতি করার অভিযোগে মামলা করেছিল। শুক্রবারই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

দিল্লির আদালতগুলিতে অন্যদের তল্লাশি করা হলেও আইনজীবীদের সচরাচর করা হয় না। হলেও খুবই ওপর ওপর তল্লাশি করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু আদালত চত্বরে ঢোকার মুখে স্ক্যানার থাকে। সেখানে তো কেউ পিস্তল নিয়ে ঢুকলে তা ধরা পড়া উচিত। অভিযুক্ত ক্যান্টিনের পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েও গেছে। পুলিশ এখন তার খোঁজে নেমেছে বলে ডিসিপি জানিয়েছেন।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ঘটনার পর দিল্লির এলজি ভি কে সাক্সেনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে। সকলের উচিত নিজের কাজ ঠিক করে করা। তা না করে অন্যের কাজে সমানে হস্তক্ষেপ ও নোংরা রাজনীতি করা উচিত নয়। কাজ করতে না পারলে ইস্তফা দেয়া উচিত।’

দিল্লিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। আর এলজি হলেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। আপ নেতা ও দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, ‘নতুন এলজি দায়িত্ব নেয়ার পর দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।’

এদিকে প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশে যেভাবে সাংবাদিক সেজে আতিককে হত্যা করা হয়েছে, তাতে সাংবাদিকদের বিপদ বাড়বে। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সন্দেহের চোখে দেখা হবে। ফলে কাজ করতে আরো অসুবিধা হতে পারে। বিশেষ করে টিভি ও ডিজিটাল সাংবাদিক, যাদের সবসময় ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করতে হয়। তারা বিপাকে পড়বেন।’

মানবাধিকার সংস্থা পিইউডিআরের কর্মকর্তা আশিস গুপ্তও মনে করেন, ‘উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিক ও দিল্লিতে আইনজীবী সেজে যেভাবে দুষ্কৃতীরা গুলি চালালো, তা সব পেশাজীবীদের কাছেই বিপদের কারণ।’ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ‘সরকারও এই সুযোগে সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ আশিস মনে করেন, ‘এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তারা ব্যর্থ হচ্ছে বলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ফলে সরকার দায় এড়াতে পারে না।’


মন্তব্য