সীমান্তে হত্যা নির্যাতন বন্ধে সমঝোতা, চুক্তি, আইন কিছুই কাজ করছে না

সীমান্ত
সীমান্ত প্রহরী  © বিবিসি

আইন ও শালিস কেন্দ্রের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিএসএফ-এর গুলিতে নয় জন নিহত হয়েছেন। আগের বছরের পাঁচ মাসে এই সংখ্যা ছিল চার জন। সীমান্তে এই সময়ে আহত হয়েছেন ১০ জন যা গতবছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সম্মত হলেও সীমান্তে সহিংসতা থামেনি, বরং বেড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে একটি অন্যতম এজেন্ডা থাকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি।

বিএসএফ-এর গুলিতে আলোচিত ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসে।

সীমান্তে অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও সাক্ষর হয়।

পরের বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বিএসএফের ডিজি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে।

আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থে সীমান্ত-রক্ষীদের গুলি চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেটাও আহত করার উদ্দেশ্যে, হত্যার উদ্দেশ্যে।

এ ব্যাপারে বিজিবি’র ৬০ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক আশিক হাসান উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানান, “রুল অব এনগেজমেন্টে বলা আছে, যদি আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয় তাহলে প্রথমে সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হবে। যদি এতে হামলাকারী নিবৃত না হয় এবং জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে গুলি ছোড়া যাবে, তবে সেটা অবশ্যই হাঁটুর নীচের অংশে হতে হবে।”

এক্ষেত্রে বিএসএফ যে গোলাগুলি করেছে তার কোন ক্ষেত্রে তারা প্রমাণ করতে পারেনি যে হতাহতের শিকার ব্যক্তিদের দ্বারা তাদের প্রাণ সংশয় বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি ছিল। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, নিহতরা সবসময়ই নিরস্ত্র ছিলেন।

দু' দেশেরই আইন অনুযায়ী, কেউ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করলে, কাঁটাতার কাটলে বা পাচারের চেষ্টা করলে তাদের গ্রেফতার করে ওই দেশের আইনানুযায়ী বিচার করতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই গুলি ছোড়া বা নির্যাতন করা যাবে না।

এজন্য সীমান্ত প্রহরায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে দুই দেশ সম্মত হলেও বিএসএফ তা মানছে না বলে অভিযোগ মানবাধিকার কর্মীদের। সুতরাং বিএসএফ যে প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে তা স্পষ্ট।


মন্তব্য