নেপাল থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত করিডোর দিলে ৩১০ বর্গকি. এলাকা ভারতকে দেবে নেপাল!

ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ
নেপালের কাকরভিট্টা সীমান্ত, এখান থেকেই বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত করিডোর করার বিকল্প ভাবছে নেপাল  © বিবিসি

নেপাল থেকে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত একটি করিডোরের জন্য জমি যদি ভারত নেপালকে হস্তান্তর করে, তাহলে নেপালও ভারতকে ৩১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা হস্তান্তর করতে পারে। নেপাল-ভারত সীমান্ত বিবাদ মেটাতে এরকমই একটা বিকল্পের কথা সামনে এসেছে।

এখন ভারতের ভূখণ্ড দিয়েই নেপাল আর বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য চলাচল করে। তবে নেপাল চাইছে ‘চিকেন নেক’ বলে পরিচিত ভারতের ওই এলাকা যদি নেপালকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়, তাহলে তারাও পশ্চিম নেপালের যেসব এলাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে ভারতের বিরোধ আছে, সেই অঞ্চলও ভারতকে দিয়ে দিতে পারে। খবর বিবিসির।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডার সাম্প্রতিক ভারত সফরের পরে দুই দেশের সীমান্ত বিরোধ মেটাতে এরকমই একটা বিকল্পের কথা ভাবছেন নেপালি বিশেষজ্ঞরা।

তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন পশ্চিম নেপালের কালাপানি এবং লিপুলেখ নদী অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের চিকেন নেক করিডোর দুটিই ভারতের কাছে সামরিক ভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারত সম্ভবত এরকম একটা বিকল্পে রাজি হবে না।

সম্প্রতি ভারত সফরে আসা নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডা বলেছেন, তার দেশ শুরু থেকেই বাংলাদেশে সরাসরি একটি রুট চায়।

নেপালে ফিরে আসার পর, প্রচণ্ডা বলেছিলেন যে তিনি নেপালি সীমান্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু তার পক্ষ থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি।

নেপালের সীমান্ত বিশেষজ্ঞ বুধিনারায়ণ শ্রেষ্ঠা বলেন, কালাপানি এলাকা নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিরোধ গত ছয় দশক ধরে চলে আসছে।

তার কথায়, “যে মানচিত্র নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিরোধ, তার সমাধানের একটা উপায় হতে পারে আন্তর্জাতিক রীতি মেনে এলাকা বিনিময় করা। লিপুলেখকে সীমান্ত নদী হিসাবে বিবেচনা করে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ৩১০ বর্গকিলোমিটার জমি ভারতের জন্য ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার ভারতের কাছ থেকে পূর্ব দিকের ৩১০ বর্গকিলোমিটার জমি নিয়ে একটি করিডোর করা যেতে পারে, যাতে পূর্ব নেপালের কাকরভিট্টা সীমান্ত থেকে সরাসরি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছনো যায়।"

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং ভারত বিশ্বাস করে যে তারা এমন কোনও পদক্ষেপ নেবে না যাতে চীনের সঙ্গে ভারতের বর্তমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়।

অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এস বি আস্থানা বলেছেন, "এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য সঠিক সময় নয় এটা। আমরা অন্যান্য অনেক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছি।" ভারত ও চীনা সেনারা বেশ কিছুদিন ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মুখোমুখি অবস্থান করছে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডা মনে করেন, ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব। তবে ভারতের সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে তাদের মনে হয় না যে এখনই কোনও বিকল্প নিয়ে আদৌ আলোচনা করা হচ্ছে।

তা সত্ত্বেও, তাদের মতে, প্রচণ্ডা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে যদি দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ মেটানোর কোনও ব্যবস্থাপনা কাজ শুরু করে, তা হবে বিরাট সাফল্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রচণ্ডার সঙ্গে দেখা করার পর বলেছিলেন যে এই বৈঠক ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ককে হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ তাদের জনগণের অনুভূতির ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।