ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলছে গোপন রুদ্ধদ্বার বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান
জো বাইডেন এবং আয়াতুল্লা খামেনী  © ডেইলি এক্সপ্রেস ইউএস

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তারা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ন্ত্রণে এবং মার্কিন বন্দিদের মুক্তি দেয়াসহ এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে ওমানে রুদ্ধদ্বার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। খবর তাসনিম নিউজের।

ডেইলি এক্সপ্রেস ইউএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বন্ধ দরজার আড়ালে ইরানের সাথে গোপন পরমাণু চুক্তি করছেন। তিনি ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিকে "মৃত" ঘোষণা করার কয়েক সপ্তাহ পরে পুনরুজ্জীবিত করার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, ডিসেম্বর থেকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা অন্তত তিনটি পৃথক অনুষ্ঠানে তাদের ইরানি প্রতিপক্ষের সাথে পরোক্ষ বৈঠকের জন্য ওমান ভ্রমণ করেছেন।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে এবার অনেকটা গোপনে চলছে এই আলোচনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাঁচ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন এবং ইরানের বিরুদ্ধে `সর্বোচ্চ চাপ` হিসেবে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

আলোচনা নীরবে কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ২০১৫ সালের চুক্তির পুনরুজ্জীবনের জন্য অপেক্ষা না করে একাধিক স্বল্পমেয়াদী চুক্তি করতে চাইছে। এই আলোচনা দুটি চিরশত্রুর মধ্যে কূটনীতি সম্পর্ক পুনরায় চালুর ইঙ্গিত দেয়।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি গত সপ্তাহে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার বরাতে তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, `মাস্কাট আলোচনা গোপন ছিল না`, তবে তিনি যোগ করেন যে জেসিপিওএ থেকে আলাদা একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার কোনো ইচ্ছা তেহরানের নেই। তবে মার্কিন সরকার এখন পর্যন্ত ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়ার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:- ইউক্রেনে জার্মানির ট্যাংক ধ্বংস করে ১০ লাখ রুবল পুরস্কার পেলেন রুশ সেনা

কাতার ইউনিভার্সিটির গালফ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক মাহজুব জুইরি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন `ইরানকে কোনভাবে ছাড় দিবে বলে মনে হচ্ছে না, বিশেষ করে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে।’

তারাও চায় না যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সর্মথক গোষ্ঠীকে আক্রমন করুক। কারণ এমনটি হলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের `আঞ্চলিক পরিস্থিতি` আরও জটিল হয়ে ওঠতে পারে, যোগ করেন জুইরি।

একটি 'অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি' হচ্ছে কি?

ইরান বিশেষজ্ঞ এবং কার্নেগি ইউরোপের একজন সম্মানিত ফেলো কর্নেলিয়াস আদেবাহরের মতে, এই মুহুর্তে `কোনও নতুন `চুক্তির’ সম্ভাবনা নেই, এমনকি অনানুষ্ঠানিক চুক্তিরও সম্ভাবনা নেই।`

ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ইরানকে বকেয়া ঋণ পরিশোধের অনুমতি পায় ইরাক। এটি ইরানের জন্য একটি ইতিবাচক পাওয়া। তবে এমনটি হবে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে পেছনে মোড় নেয়ার মতো। ওয়াশিংটন তেহরানের পারমাণবিক অগ্রগতির দিকে নজর দেয়া থেকে সরে আসার সমান, আদেবাহর আলজাজিরাকে বলেছেন।

আরও পড়ুন:- অর্থের অভাবে করাচি বন্দর আমিরাতের হাতে তুলে দিচ্ছে পাকিস্তান!

ইরান এই অবস্থানে অটল রয়েছে যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত জেসিপিওএ- এর বাইরে নয়।

যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক ও অস্ত্র কর্মসূচির উপর সীমা-পরিসীমা আরোপ করার পাশাপাশি ইরানে বন্দী আমেরিকানদের মুক্তি নিশ্চিত করতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের কথিত ভূমিকা সীমিত করতে এবং জ্বালানির বাজার ও তেলের দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে চায়।

একটি স্বল্প-মেয়াদী চুক্তি `উভয় পক্ষের জন্যই ভাল` কারণ এটি বড় ছাড়ের মতো দেখাবে না এবং একই সাথে পরিস্থিতিকে প্রশমিত করবে, জুইরি বলেছেন।

এমন একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হবে না, যেখানে অনেকে রাশিয়াকে কথিত সামরিক সহায়তার কারণে ইরানকে সুবিধা দেওয়ার বিরোধিতা করছেন।

আরও পড়ুন:- ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে অস্ত্র সংকটে জার্মানি

ইরান পশ্চিমা বিশ্বকে `বিচলিত` করে রাশিয়াকে ড্রোন দিয়েছে। জুইরি বলেন, এটি ইরান ও পশ্চিমাদের মধ্যে এই মুহূর্তে চুক্তির জন্য একটি প্রধান অন্তরায়।

তেহরান যুক্তি দেখায় তারা যুদ্ধের কয়েক মাস আগে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছিল। তবে এখন আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করতে চায় ইরান।

ইরানও আশা করতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা মওকুফ করলে বিদেশে আটকে থাকা বিলিয়ন ডলার মূল্যের ইরানি সম্পদ মুক্ত হবে। ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এই সপ্তাহের শুরুতে দোহায় ছিলেন, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কাতার প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মওকুফের পর সাম্প্রতিক ২ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল ইরানকে দেয় ইরাক।